খালেদা জিয়াকে কি স্লো পয়জনিং করা হয়েছে, প্রশ্ন বিএনপির

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কি স্লো পয়জনিং করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একটা পরিত্যক্ত ভবন থেকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সেদিন কি...
ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কি স্লো পয়জনিং করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একটা পরিত্যক্ত ভবন থেকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সেদিন কি খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়েছিল? আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, এদের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। যারা জোর করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে, কোনো ভোট না করে ক্ষমতায় বসে থাকতে পারে, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে পারে, যারা অবলীলায় গণতন্ত্রকারী নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যা করতে পারে এবং পঙ্গু করে দিতে পারে, অবলীলায় ইলিয়াস আলীসহ ৫০০ নেতা-কর্মীকে গুম করে দিতে পারে। তাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এ দিন সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। সঞ্চালনা করেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু।

এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী যিনি এ দেশে নারী ক্ষমতায়নের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ করে গেছেন। তিনি বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি এ দেশে বাক-স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল জনগণ কী চায় তা তিনি বুঝতে পারতেন। সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ নিয়ে এসেছিল, সেটা তিনি সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন। কারণ বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এখনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া ‍খুব কঠিন। সে জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বচানের ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলেন। এখন তারা বাতিল করেছে। আজ সেই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এক-এগারোতে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাকে সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একটা পরিত্যক্ত ভবনে, যেখানে ইঁদুর ঘোরাঘুরি করতো, স্যাঁতসেঁতে ঘরে প্রায় ২ বছর তাকে রাখা হয়েছিল। এরপরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

আজ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সেদিন কি খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়েছিল? আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই। খালেদা জিয়া এত অসুস্থ, চিকিৎসকরা বলেছেন আমাদের সব বিদ্যা, সব জ্ঞান প্রায় শেষ। আমরা এখানে আর এর বেশি কিছু করতে পারবো না। তাকে অবিলম্বের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। শেখ হাসিনা শুনতে চান না। মন্ত্রীরাও বলে উচিত, আওয়ামী লীগের নেতারাও বলে মানবিক কারণে যেতে দেওয়া উচিত। দেশের মানুষ তো বলছেই সারাক্ষণ! তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এটা শুনতে চান না। তার প্রতিহিংসা, তার প্রতিশোধ। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে শুধু নয়, জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই চক্রান্ত করছেন— বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, এ দেশকে তারা বিক্রি করে দিয়েছে। এ দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, তার আগে সংগ্রাম হয়েছিল। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলেন সেই গণতন্ত্রকে তারা পুরোপুরিভাবে নির্বাসিত করেছেন। তার প্রমাণ আমরা দেখছি পত্র-পত্রিকায়। বাইডেন গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ভার্চুয়াল সম্মেলন করতে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। নেপাল, পাকিস্তান, ভারতের নাম আছে কিন্তু বাংলাদেশের নাম নেই। ওই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

কয়েকদিন আগে আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ খবর বেড়িয়েছে, বাংলাদেশে যে বিভিন্ন খাত আছে; স্বাস্থ্য খাত, সড়ক খাত, প্রতিরক্ষা খাত, প্রশাসন খাত এ সবগুলোতে দুর্নীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বলা হচ্ছে এটা অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে আছে। গোটা বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লাখ লাখ পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে এবং সে পুলিশ নিয়োগ করা হয় দলীয়ভিত্তিতে। কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা একজন কনস্টেবলকে ঘুষ দিতে হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচিত প্রার্থী তারা পরস্পরকে গুলি করে হত্যা করছে। কুমিল্লায় কমিশনারকে ব্রাস ফায়ার করে হত্যা করেছে। আমি গতকালও বলেছিলাম, অত্যন্ত অশনি সংকেত। কারণ আমরা ৭২ থেকে ৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেখেছি ঈদের জামাতে ব্রাস ফায়ার করে লোক মারছে। একটা জায়গায় তারা ব্যর্থ হয়নি। গণতন্ত্রের জন্য যে আন্দোলন, বিরোধী দলের যে আন্দোলন, আমাদের বেঁচে থাকার যে আন্দোলন তাকে দমন করার জন্য তারা খুব সিদ্ধহস্ত। এটার উত্তরণ ঘাটাতে হবে— বলেন ফখরুল।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এমন এক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যার কাজই হচ্ছে গণতন্ত্রকে হত্যা করা এবং আমাদের সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। তাই আমাদের অত্যন্ত সততার সঙ্গে কৌশলীভাবে যেতে হবে। আমরা চাই আজকেই এই সরকারকে ঘাড় ধরে ফেলে দিই। সবাই চায়, প্রত্যেকটা মানুষ চায় বাংলাদেশের। শুধু আমি-আপনি-বিএনপি না, প্রত্যেকটা মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু যদি আমরা ভুল করি, আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।

সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এক মুহূর্ত কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণ আপনাদের বিচার করবে। জবাবদিহি করতে হবে, তখন আর কাউকে খুঁজে পাবেন না। পেছনের দরজাও খুঁজে পাবেন না।

Comments

The Daily Star  | English

Trial of murder case drags on

Even 11 years after the Rana Plaza collapse in Savar, the trial of two cases filed over the incident did not reach any verdict, causing frustration among the victims.

9h ago