লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম

‘মাঘের জারোত হামরাগুলা মরি যাবার নাইগছে বাহে’

স্থানীয় প্রবাদ আছে 'মাঘের জারে বাঘ কান্দে'। সেই প্রবাদ যেন সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের জন্য। মাঘের মাঝামাঝিতে এসে এসব এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। তীব্র শীত ও কনকনে বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এরসঙ্গে আছে কুয়াশা।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

স্থানীয় প্রবাদ আছে 'মাঘের জারে বাঘ কান্দে'। সেই প্রবাদ যেন সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের জন্য। মাঘের মাঝামাঝিতে এসে এসব এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। তীব্র শীত ও কনকনে বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এরসঙ্গে আছে কুয়াশা।

এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। কিন্তু, খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভিন্ন। কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে তাদের।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামের মনজুর আলী (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জারোত হামরাগুলা মরি যাবার নাইগছে বাহে। মাঘের জারোত হামরাগুলা কাহেল হয়া পড়ছি। জারের ঠ্যালায় ঘর থাকি বাইরোত বেরবার পাবার নাগছোং না। জমিত যাওয়া নাইগবে, রোয়া গারা নাইগবে। বুধবার রাইত থাকি এমন হাড়-কাঁপনি জার পড়ছে। শীতোত সোককিছু ঢাকি আছে, কিছুই দ্যাখা যায় না।'

কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে আছে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশা। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

একই গ্রামের সোলেমান আলী (৫০) বলেন, 'জারের ঠ্যালায় ঘর থাকি বাইরোত যাবারে মন চাবার নাইগছে না। কাজ না করিয়াও কোনো উপায় নাই। কাছের ঠ্যালাত পরি ঘর থাকি বাইরাত যাওয়ায় নাইগছে। জারোত খুব কষ্ট নাইগছে। জমিত কাজ না করলে কাই খাবার দিবো। বউ ছওয়া নিয়া তাক হইলে উপাস থাকা নাইগবে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের কান্দ্রি বালা (৫৮) জানান, কয়েকদিন আগেও তেমন ঠাণ্ডা ছিলো না। বুধবার রাত থেকে হঠাৎ ঠাণ্ডা বাড়তে থাকে। এমন ঠাণ্ডা পড়েছে এতে তাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, 'জারের ঠ্যালাত হামরাগুলা জাইবরা টাইবরায় আগুন দিয়া গাও গরম কইরবার নাগছি। আগুন না তাপাইলে হামরাগুলা জারোত কাবু হয়া যামো। এ বছরোত এমন জার দেখাং নাই। খুব জার নাইগবার নাইগছে।'

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোরগাছ গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নৌকার মাঝি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'জারের ঠ্যালায় হামরা নৌকা ঠিকঠাক চালবার পাবার নাইকছোং না। নৌকাত তেমন যাত্রীও হওয়ার নাইকছে না। গাত ম্যালাগুলা কাপড়চোপড় দিয়াও জার দমে না। কনকন হাড়-কাঁপানি জারোত হামরাগুলা কাবু হয়া গ্যাছোং।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তাপমাত্রা রেকর্ড কিপার আনিছুর রহমান শনিবার সকালে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার থেকে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে আছে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, 'চলমান শীত আগামী ২-৩ দিন থাকলে কৃষিতে ক্ষতি হতে পারে। বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শীতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় বোরো ধানের চারা রোপণ বিলম্বিত হতে পারে। বিশেষ করে সবজির ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English
Road crash deaths during Eid rush 21.1% lower than last year

Road Safety: Maladies every step of the way

The entire road transport sector has long been plagued by multifaceted problems, which are worsening every day amid sheer apathy from the authorities responsible for ensuring road safety.

6h ago