বিশ্বে ‘ভ্যাকসিন বিভাজন’ দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ধনী-দরিদ্রের মধ্যে 'ভ্যাকসিন বিভাজন' দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি ৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। 'জাতিসংঘের সাধারণ এজেন্ডা: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের উদ্যোগ' শীর্ষক প্রচারিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'সময়ের সবচেয়ে জরুরি আহ্বান হচ্ছে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভ্যাকসিন বিভাজন দূর করা।'
প্রধানমন্ত্রী রেকর্ডেড বক্তব্যে আরও বলেন, আমাদের একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা বৈষম্যকে সামগ্রিকভাবে মোকাবিলা করবে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, লিঙ্গ সমতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো এসডিজিগুলোর সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে; আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর বিশেষ অর্থায়নের চাহিদাগুলো সমাধান করতে হবে, যার মধ্যে এলডিসি ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো রয়েছে।'
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসী ও চলমান লোকদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান অত্যন্ত জরুরি; এই বিবর্তিত ডিজিটাল যুগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের কঠোরভাবে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে হবে।
শেষ প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, আমাদের সমাজে প্রকৃত 'পরিবর্তনের নির্মাতা' হিসেবে কাজ করার জন্য আমাদের অবশ্যই নারী ও মেয়েদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে হবে।
শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সাধারণ এজেন্ডা বিষয়ে মহাসচিবের প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে বেশি আঘাত হেনেছে। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও বাধা দূর করার ক্ষেত্রে আমাদের কয়েক দশকের উন্নয়ন পিছিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার প্রথম ভাষণে বলেন, 'সকলেরই নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য জীবনযাত্রার পর্যাপ্ত মানের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব রয়েছে।' তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, এই দৃষ্টিভঙ্গী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
শেখ হাসিনা বলেন, এই চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন এবং কোভিড থেকে পুনরুদ্ধারে 'হোল সোসাইটি' দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। আমরা আমাদের সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশকে আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রেখেছি। এর মধ্যে রয়েছে নারী, অতি দরিদ্র, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী মানুষ এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী।
বৈশ্বিক সুদৃঢ় খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
'জাতিসংঘ ফুড সিস্টেমস সামিট ২০২১'-এ ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে আরও ৫ দফা সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি 'স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা' গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
একইসঙ্গে তিনি একটি বৈশ্বিক জোট ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা সব নাগরিকের কল্যাণ ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।
পূর্ব-রেকর্ডকৃত বক্তৃতায় ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা ১০ বিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য আরও খাদ্য উৎপাদন করা অপরিহার্য।
শেখ হাসিনা তার সুপারিশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি উন্নয়নের জন্য গবেষণা, বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি বিনিময়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বর্ধিত তহবিল প্রয়োজন।
তিনি টেকসই নিরাপত্তা অর্জনে প্রযুক্তি শেয়ারিংসহ জলবায়ুজনিত চরম ইভেন্টগুলোর সঙ্গে অভিযোজনের জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল ছাড়েরও পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছি এবং আমরা দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি।
Comments