বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িক হামলাকে উদ্বুদ্ধ করছে: আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এর আগে দেশে সাম্প্রদায়িক যেসব হামলা হয়েছে সেগুলোর বিচার আসলে ঝুলে আছে। ফলে বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই বিচারহীনতা এ ধরনের হামলাকে উদ্বুদ্ধ করছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এর আগে দেশে সাম্প্রদায়িক যেসব হামলা হয়েছে সেগুলোর বিচার আসলে ঝুলে আছে। ফলে বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই বিচারহীনতা এ ধরনের হামলাকে উদ্বুদ্ধ করছে।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের ঘটনাগুলোর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। রাষ্ট্র যদি দায় না নেয় তাহলে এ ধরনের সহিংসতা বার বার ঘটতে থাকে।'

আজ বৃহস্পতিবার উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আয়োজিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ধর্ম বিশ্বাস আর সাম্প্রদায়িকতা এক বিষয় নয়। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দুইটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, এক সাম্প্রদায়িকতা, দুই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। নানা কারণে এ দেশে সাম্প্রদায়িকতা আছে। সাম্প্রদায়িকতা সুবিধাবাদীদের হাতিয়ার। যারা সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে তাদের আসলে ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই নেই।'

তিনি বলেন, 'এই সহিংসতায় শুধু সংখ্যালঘুরা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সারাদেশের মানুষ। কিন্তু একটা মহল সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় লাভবান হচ্ছে। দেশ ও দেশের বাইরে তারা নিজেদের লাভ খুঁজে নিচ্ছে। এরা বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়। এদের সম্পর্কে সাবধান হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সংখ্যালঘুরা শান্তিতে না থাকলে সংখ্যাগুরুদের জন্য তা হবে অশান্তির কারণ। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষ বাঙালি, মুসলমান কিন্তু এদের বাইরেও অনেকে বসবাস করে। এই যে বৈচিত্র্য ভাষা বর্ণের জাতির এটাই আমাদের শক্তি। 'আমি' ছাড়া অন্যদের সম্মান করার মাধ্যমেই জাতীয় বিকাশ নিহিত। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা মানেই সংখ্যাগুরুদের নিরাপত্তা।'

'যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা তো বটেই, যারা আক্রান্ত হননি তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এটি আরও ভয়ংকর। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের একটা বড় উপায়,' তিনি যোগ করেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মাদ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শাহেদুর রশিদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবউননেছা প্রমূখ। 

সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতি সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন। এ সময় তিনি সবাইকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার জোরালো আহ্বান জানান।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে একই জায়গায় অধ্যাপক বশির আহমেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধন করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় অনলাইনে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

তিনি বলেন, 'এ হামলা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য একটি ন্যক্কারজনক আঘাত। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই সময়ের (পাকিস্তানি আমল) কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।'

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্যদ্বয়, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও, কর্মচারী।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Why planting as many trees as possible may not be the solution to the climate crisis

The heatwave currently searing Bangladesh has led to renewed focus on reforestation efforts. On social media, calls to take up tree-planting drives, and even take on the challenge of creating a world record for planting trees are being peddled

27m ago