‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক-আদর্শিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের আদর্শিক মানচিত্রকেও বদলে দিয়েছে।'
মৈত্রী দিবস ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দোরাইস্বামী বলেন, 'আপনাদের স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, অভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ভাষার এই বন্ধন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একসঙ্গে থাকতে না পারার মতো মিথ্যা তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। আপনাদের মুক্তি সংগ্রাম বর্বরতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের অনিবার্যতা প্রমাণ করেছিল।'
তিনি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানি নিপীড়ন থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের শক্তিশালী বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের অনেক উপাদান ছিল যা ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় নিশ্চিত করেছিল।'
'এর মধ্যে ছিল কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয়। যেসব এলাকায় আঘাতপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে অভ্যন্তরীণ সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং কৌশলগত সামরিক সহযোগিতা,' যোগ করেন ভারতীর হাইকমিশনার।
'আমাদের অংশীদারিত্ব এরপরেও অনেক এগিয়ে গেছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আপনাদের প্রবাসী সরকার বিজয়ের পর শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন এবং ভারতীয় সেনার দ্রুত প্রত্যাহার করার জন্য আগেই তাদের ভারতীয় সমকক্ষদের সাথে পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। দেশ পুনর্গঠন এবং খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থাপনা এবং রেলওয়ে ও বন্দর পুনরুদ্ধারের জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ উদ্বাস্তু দেশে ফিরে যায়, যা ইতিহাসে এক বিরল নজির। ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে প্রায় ১ কোটি শরণার্থী তাদের স্বাধীন দেশে ফিরেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিবাহিনীকে সমর্থনকারী ভারতীয় বাহিনীকে স্বাধীনতার ৩ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এটিও প্রকৃতপক্ষে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। ততদিনে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রক্রিয়া ভালভাবে চলছে এবং বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।'
'আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি। আজ, আমাদের দেশগুলো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়নমূলক, সাংস্কৃতিক, নিরাপত্তা এবং এমনকি মানুষে-মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার,' বলেন তিনি।
'আগামী ৫০ বছরে আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি এবং আমাদের ইতিহাসকে একসঙ্গে গড়ে তোলার জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হবে' উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের এখন নিশ্চিত করতে হবে যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস যেন বুঝতে পারে। কারণ আজকের তরুণরাই এই অংশীদারিত্বকে অপরিবর্তনীয় করে তুলতে পারবে।'
Comments