‘পাকিস্তান জঙ্গি রপ্তানি করে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র করেছে’
পাকিস্তান অনবরত জঙ্গি রপ্তানি করে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার। আজ মঙ্গলবার 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানের পুনরুত্থান: তরুণ সমাজের করণীয়' শীর্ষক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, 'আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান তালেবানদের সমর্থন করে। পাকিস্তান অনবরত জঙ্গি রপ্তানি করে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ফলে সামগ্রিক বিবেচনায় ভবিষ্যতে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশ হবে আমাদের বাংলাদেশ।'
'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানের পুনরুত্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয়ভাবে ও রাজনৈতিকভাবে অনলাইনে এই তালেবানি শক্তির কঠোর মোকাবিলা করা না হলে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে শিগগির ব্যবস্থা নিতে কথা বলেছি। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি জঙ্গিবাদী প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করার। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করছি।'
'আশা রাখি এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে নির্মূল কমিটির এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এক সময় বড় প্রচেষ্টায় পরিণত হয়ে বাংলাদেশকে তালেবানিকরণ থেকে মুক্ত করবে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'নির্মূল কমিটির জঙ্গি ও মৌলবাদবিরোধী আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে যাদের আলোচনা করা দরকার সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলো এসব বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানের পুনরুত্থান আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক প্রচারের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিকল্প নেই, আবার জঙ্গিবাদী বিভিন্ন অপরাধের বিস্তার ঘটছে এসব প্ল্যাটফর্মে।'
'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি' উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, 'ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় শতাধিক আইডি আমরা শনাক্ত করেছি যেগুলো বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের অবস্থান পরিচয়সহ বিস্তারিত আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকেও পাঠিয়েছি। তারা বিভিন্ন দেশবিরোধী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জঘন্য অপপ্রচারে লিপ্ত। আমরা নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না।'
নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, 'আফগানিস্তানে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী তালেবানদের অবৈধ ক্ষমতা দখলে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী তালেবানপন্থীরা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। ইউটিউব ও ফেসবুকে বাংলাদেশের তরুণদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান বানাবার জন্য বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে।'
'দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে সরকার মাঠ পর্যায়ে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দিলেও ইসলামের নামে ওয়াজ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার, বিশেষভাবে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসমূলক প্রচারণা প্রতিরোধে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দৃশ্যমান নেই। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী তালেবানের তথাকথিত বিজয় বাংলাদেশে সমচরিত্রের দল ও সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠিত হওয়ার যে সুযোগ তৈরি করেছে, এখনই যদি তা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা না হয় ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় আশঙ্কা করছি,' বলেন তিনি।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামের নামে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক তরুণ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাঁধা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার প্রসার ঘটাতে চান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং একটি নীতি নির্ধারণীমূলক জাতীয় কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।'
Comments