কেন্দ্র থেকে নির্বাচন অফিসে যেতেই বেড়ে গেল নৌকার ১০০ ভোট
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র থেকে নির্বাচন অফিসে যেতেই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১০০ ভোট বেড়ে গেছে। ভোটারের সংখ্যাও বেড়ে গেছে ১০০।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের ফলাফলের তালিকা ও ঝিমাই চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফলাফলের তালিকা মেলাতে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টার এমন অসঙ্গতি পেয়েছে।
ঝিমাই চা বাগান কেন্দ্র থেকে ডেইলি স্টারের সংগ্রহ করা তালিকা অনুসারে, নৌকার প্রার্থী মোছাদ্দিক আহমেদ নোমান ৩৪৯ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস মার্কার প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলী ১৬৮ ভোট পেয়েছেন। এ তালিকায় মোট ভোটার উপস্থিতি ৬০৪।
আর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করা তালিকায় দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী মোছাদ্দিক আহমেদ নোমান ৪৪৯ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস মার্কার প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলী ১৬৮ ভোট পেয়েছেন। এ তালিকায় মোট ভোটার উপস্থিতি ৭০৪ দেখানো হয়েছে।
এ ছাড়া, প্রার্থী ৪ জন থাকলেও গণনার বিবরণীতে সই রয়েছে মাত্র ২ জনের।
এ ছাড়া, একই ইউনিয়নের করেরগ্রাম ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বিবরণীতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ক্ষেত্রে যে ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে, তার সঙ্গে সদস্য পদপ্রার্থীদের ভোটার উপস্থিতির মিল নেই। আবার সদস্য পদপ্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীর ক্ষেত্রেও উপস্থিত ভোটারের সংখ্যা আলাদা। যদিও কেন্দ্রে প্রত্যেক ভোটারকে ৩ পদের প্রার্থীর ব্যালট একসঙ্গেই দেওয়া হয়েছে।
করেরগ্রাম ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বিবরণী অুনসারে, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১০২ জন। এর মধ্যে বাতিলকৃত ভোট ১৯টি। সদস্য প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন ৯৩০ জন। সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন ৮৭৮ জন। তবে বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা উল্লেখ নেই। এই বিবরণীতে প্রিজাইডিং অফিসারের সই থাকলেও, এজেন্টদের সই নেই।
নির্বাচন অফিস থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ভোট দেওয়া ভোটারের সংখ্যা একই আছে। তবে, তাদের সঙ্গে সদস্য পদপ্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের ভোটারের সংখ্যার যে পার্থক্য ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বিবরণীতে ছিল, তা এখানে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গরমিল হওয়া ভোটগুলো বাতিলকৃত ভোটের তালিকায় অন্ত:র্ভুক্ত করা হয়েছে।
আনারস মার্কার এজেন্ট শাকির মিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, '৩ পদের ক্ষেত্রে ভোটারের সংখ্যা ৩ রকম দেখে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। প্রিজাইডিং অফিসার আমাদের সই পর্যন্ত নেননি।'
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলী বলেন, 'বিভিন্ন সেন্টার থেকে ফলাফল শিট পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারিনি। প্রিজাইডিং অফিসাররা আমাকে ফলাফলের তালিকা দেননি। অনেক কষ্ট করে আমি ঝিমাই চা বাগানের এই তালিকাটি সংগ্রহ করেছি। সেটির সঙ্গে নির্বাচন অফিসের তালিকা মিলিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্র থেকে নির্বাচন অফিসে যেতে যেতে নৌকার ১০০ ভোট বেড়ে গেছে। এভাবেই আমাকে পরাজিত করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'করেরগ্রাম ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান পদে নৌকায় সিল দিয়েছেন। কিন্তু সদস্য বা সংরক্ষিত নারী আসনের পদপ্রার্থীদের ব্যালটে সিল দেননি তারা। সেজন্যই ভোটের সংখ্যায় গড়মিল হয়েছে।'
এ ব্যাপারে জানতে করেরগ্রাম ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রহমত আলীকে একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আহসান ইকবাল বলেন, 'কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলীর স্বামী এসব অভিযোগ করেছেন আমাদের কাছে। তাকে বলেছি ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে। মামলা করলে ট্রাইব্যুনাল যদি যৌক্তিক মনে করে, তাহলে পুন:গণনার আদেশ দিতে পারেন।'
Comments