বাংলাদেশ

‘দেশ স্বাধীন করেছি কি এমন হামলা-নির্যাতনের দৃশ্য দেখার জন্য?’

‘ইসকন এলাকার হিন্দু ও মুসলিম অসহায়, এতিম ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করে। সেই প্রতিষ্ঠানে যে এভাবে হামলা ও তাণ্ডব চালানো হবে, তা জীবনেও কল্পনা করিনি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি কি এমন হামলা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখার জন্য?’
ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/ স্টার

'ইসকন এলাকার হিন্দু ও মুসলিম অসহায়, এতিম ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করে। সেই প্রতিষ্ঠানে যে এভাবে হামলা ও তাণ্ডব চালানো হবে, তা জীবনেও কল্পনা করিনি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি কি এমন হামলা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখার জন্য?'

গত মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রস প্রিয় দাস অধিকারী ওরফে রতেশ্বর দেবনাথ (৭৫)। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার নরোত্তমপুরে অবস্থিত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর-নিত্যানন্দ মন্দিরের (ইসকন) অধ্যক্ষ।

গত শুক্রবার ইসকন মন্দির ও পূজা মণ্ডপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলায় মন্দিরের ২ ভক্ত নিহত হন।

ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরে রতেশ্বর দেবনাথ বলেন, 'শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই (বেলা ১১টা) প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। অর্ধশতাধিক ভক্ত তখন ইসকন মন্দিরে ছিলেন। তাদের দুপুরের খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় প্রথমে পাশের বিজয়া সার্বজনীন মন্দিরে এবং পরে ইসকন মন্দিরে কয়েকশো মানুষ নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ভক্তদের প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর মন্দিরের আবারও কয়েকশো মানুষ বিজয়া মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ও ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।'

'এ সময় ইসকন মন্দিরের স্টাফ ও ভক্তরা তাদের থামাতে চাইলে ভক্তদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা রড ও লাঠি দিয়ে ভক্তদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। যতন সাহা ও প্রান্ত চন্দ্র দাস নামের ২ ভক্তকে মেরে ফেলে তারা। মন্দির ধবংসস্তুপে পরিণত হয়', রতেশ্বর বলেন।

হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

ইসকন অধ্যক্ষ বলেন, 'সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০০০ সাল থেকে ইসকনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছি। ২১ বছর ধরে মন্দির পরিচালনা করছি। বিগত বছরগুলোতে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দুর্গাপূজাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করেছি। কিন্তু, এবার এটা কী হলো?'

হামলার সময় পুলিশ ও প্রশাসন সময়মতো সাহায্য করতে আসেনি বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'হামলার সময় আমার সঙ্গে একটি টিভি চ্যানেলের ফটো সাংবাদিক জয় ভূইয়া ছিলেন। আমরা দুজন জরুরি সেবা ৯৯৯, বেগমগঞ্জের ওসি, ইউএনও, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও ফায়ার সার্ভিসকে অনেকবার কল দিই। কিন্তু কেউ আসেনি। হামলাকারীরা আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা তাণ্ডব চালিয়ে বীর দর্পে চলে গেল। কল করার সঙ্গে সঙ্গে যদি পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে আসত, তাহলে হয়তো হামলাকারীরা এত ধবংসযজ্ঞ চালাতে পারত না।'

অধ্যক্ষ জানান, হামলাকারীরা মন্দিরের অফিস কক্ষের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ভক্তদের দান করা টাকা, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে মন্দিরের ক্ষতি ৫০ লাখ টাকারও বেশি। এ ক্ষতি কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম অবশ্য পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, 'প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। হামলার খবর শুনে আমি চৌমুহনীতে ছুটে গেছি। যেখানে হামলার খবর পাওয়া গেছে সেখানেই পুলিশ পাঠানো হয়েছে।'

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, 'পূজায় প্রতিটি উপজেলাতে ২ জন করে এবং চৌমুহনীতে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে। তারা বিজিবি নিয়ে সবসময় মাঠে ছিলেন। এরপরেও যদি কারো বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Pak PM lauds Bangladesh’s economic progress

Says ‘we feel ashamed when we look towards them’

1h ago