কর্মস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নেসকো কর্মচারীর মৃত্যু

বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট রাজশাহীতে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মী রেজাউল ইসলাম (৩৮) মারা গেছেন।
রাজশাহী
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট রাজশাহীতে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মী রেজাউল ইসলাম (৩৮) মারা গেছেন।

নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরীন ইয়াসমিন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে মারা যান রেজাউল।

গতকাল দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজশাহী শহরের পাঠানপাড়া এলাকায় নেসকোর একটি সাব স্টেশনের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন তিনি।

বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আহত কর্মচারী রেজাউল ইসলাম (৩৮) শহরের চন্দ্রিমা থানা এলাকার মুসরইল এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পুলিশ ও নেসকো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। তার শরীরে প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে ও একাধিক ফ্র্যাকচার হয়েছে।

হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার গতকাল দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে তাকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়। তবে, নাটোরের বনপাড়ায় পৌঁছালে তার অবস্থার অবনতি হয়। এ কারণে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ১০টায় তাকে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে পরীক্ষা করে জানা যায়, তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ফুসফুস পুড়ে গেছে।

রেজাউলের এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেজাউল বাঁশের মই দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে কাজ করছিলেন। সেখানে দুটি ৩৩ কেভিএ ও একটি ১১ কেভিএ লাইন ছিল। হঠাৎ রেজাউল যে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করছিলেন তাতে স্পার্ক করে আগুন ধরে যায় এবং রেজাউল বাঁশের মই থেকে কমপক্ষে ২০ ফুট উচ্চতা থেকে নিচে পড়ে যান।

তিনি আরও জানান, রেজাউল তার কাজ শেষ করে নিচে নামছিলেন। কিন্তু, তখন ৩৩ কেভিএ-এর ওপর একটি তার পড়েছিল। পরে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা নেসকোর এক কর্মকর্তা তারটি সরিয়ে দিতে বলেন। এসময় রেজাউল আবার ওপরে উঠে জানতে চান সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন কি না, তখন ওই কর্মকর্তা জানান লাইন বিচ্ছিন্ন আছে। কিন্তু, রেজাউল তারটি সরাতে গেলেই রেজাউল বিদ্যুতায়িত হন এবং নিচে পড়ে যান।

নেসকোর কর্মচারীদের অভিযোগ, রেজাউল নেসকোর গাড়ি চালকদের হেল্পার হলেও তাকে প্রায়ই বৈদ্যুতিক কাজে পাঠানো হতো।

তারা জানান, রেজাউলকে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ওঠার জন্য একটি বাঁশের মই দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি।

কর্মচারীরা রেজাউলের সুচিকিৎসায় নেসকো কর্মকর্তাদের অবহেলার অভিযোগও করেন।

তবে, নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। আমাদের নিজস্ব চিকিৎসক সব সময় হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ছিলেন।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে রেজাউল যে কাজের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তা সম্পন্ন করেছিলেন। নিচে নেমে আসার সময় অন্য একটি সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন।'

তিনি বলেন, 'তার (রেজাউলের) আহত হওয়া আমাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল। ঘটনাটা তদন্ত করতে একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামকে ফোন করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী অনিত কুমার রায় বলেন, 'রেজাউল গাড়ির ড্রাইভারের নয়, লাইনম্যানদের সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তবে, তিনি বৈদ্যুতিক কাজ এবং যানবাহন চালনা উভয় ক্ষেত্রে দক্ষ ছিলেন।'

তিনি দাবি করেন, 'রেজাউলকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছিল।'

বাঁশের মই ব্যবহার করা এবং সেফটি গিয়ার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কর্মচারীরা মাঝে মাঝে সেফটি গিয়ার ব্যবহার করেন না।'

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

2h ago