তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক গোপনীয়তা থেকে বেরিয়ে আহবান টিআইবির

তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে গোপনীয়তার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছতার সংস্কৃতিতে উত্তরণের আহবান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত আলোচনা সভার বক্তারা। 
ছবি: সংগৃহীত

তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে গোপনীয়তার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছতার সংস্কৃতিতে উত্তরণের আহবান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত আলোচনা সভার বক্তারা। 

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে টিআইবি আয়োজিত 'তথ্য অধিকার আইন: বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা' শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে অতিথিরা এই আহ্বান জানান। 

আলোচনা সভা শেষে টিআইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে যখন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো ঔপনিবেশিক আইনের সুযোগ নিয়ে গোপনীয়তার সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, তখন তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এ আইনের কার্যকর সুফল পেতে হলে স্থানীয় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আইনটি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে বলেও বলা হয়েছে। 

আলোচনায় অংশ দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান বলেন, 'দেশে প্রায় ১১ শ আইনের মধ্যে এই একটি আইন জনগণ সরাসরি সরকারের ওপর প্রয়োগ করতে পারে। তাই আইনটির ব্যবহারে নাগরিকদের সচেতনতা আরও বাড়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশের বিষয়টিকেও আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ওয়েবসাইটে নিজেদের তথ্য হালনাগাদ করা, টেকনিক্যাল বিষয়সমূহকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা জরুরি। প্রথাগত উপায়কে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অ্যাপস ইত্যাদি ব্যবহার করে এর পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা ডিজিটাইজ করা গেলে আরও বেশি তথ্য সহজে পাওয়া যাবে।'  

'তথ্য অধিকার আইনের সফলতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকেও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন', বলে মন্তব্য করেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব)-এর সহকারী পরিচালক রুহি নাজ। তিনি আরও বলেন, 'আইনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাগরিক ও সরকার সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে।' 

এ ছাড়া, পলিসি প্রতিযোগিতার প্রতিযোগিদের উদ্দেশ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান বলেন, 'কোনো একটি আইন বা পলিসি তৈরি করা মানেই এটি নয় যে, তা এভাবেই বাস্তবায়িত হবে। বরং এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের বহিরাগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সরকার কাগজে স্বচ্ছতার কথা বললেও, বাস্তবে সেটিই করবে এমনটাও নয়। এই সুক্ষ্ম বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সমাধানের পথ বের করতে হবে।'  

তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বেসরকারি সংস্থাসমূহকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন মন্তব্য করেন ম্যানেজমেন্ট রিসোর্সেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, 'তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা আইনটির যথাযথ প্রয়োগে অন্যতম প্রধান বাধা। এটি সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। আবার এমন কিছু কমিউনিকেশন্স ম্যাটেরিয়ালও তৈরি হচ্ছে, যাতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক প্রচারণা প্রয়োজন।' 

বছরে শুধু একটি দিন নয় বরং ৩৬৫ দিনই তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগে সচেতন থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, 'এই আইন নিয়ে আমাদের সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি। সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এই আইনটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি আইন। সমস্ত অংশীজন মিলেই এর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ আইনের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে নাগরিকের মধ্যে তথ্য পাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।'

গত ১২ বছরে এই চাহিদা অনেকটা বাড়লেও আরও অনেক অগ্রগতি প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তথ্যের চাহিদা ও যোগান দুটিই বিশেষভাবে আরও বাড়াতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের সুযোগ নিয়ে গোপনীয়তার সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমাদেরকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিহার করে স্বচ্ছতার সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নয়তো আইনটি কাগুজে হয়েই থাকবে, উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না। একইসঙ্গে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে তথ্য প্রবাহকে আরও জোরালো করতে হবে।' 

এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে অধিকতর তৎপর হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক। 

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে 'তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর কার্যকর প্রয়োগ বিষয়ক পলিসি প্রস্তাবনা' প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করা হয়। এতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রান্ত ও ইফফাত হকের সমন্বয়ে গঠিত টিম 'প্লাগড ইন'। আর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী তাওহীদ ও কাজী আকিব হোসেনের দল 'ইউটোপিয়া' এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহনীল জুলকারনাইন ও হুমায়রা মীযানের দল 'প্যারাডাইম শিফটারস'। 

উল্লেখ্য, এবছর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে টিআইবি ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্য কমিশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ২৯ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে; ২২ সেপ্টেম্বর ইন্ডিজেনাস পিপলস্ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (আইপিডিএস)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পাহাড় ও সমতলের ৪০ জন তরুণ এবং ইয়েস সদস্যদের অংশগ্রহণে আরও একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সবশেষ আজ জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে তথ্য অধিকার আইনবিষয়ক এই পলিসি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হলো। এই প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে সারাদেশের ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই সদস্যবিশিষ্ট ৬৮টি টিম অংশগ্রহণ করে এবং চূড়ান্ত পর্বে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি টিম প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়। এছাড়া আইনটি সম্পর্কে অধিক জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কার্টুনভিত্তিক একটি স্টিকার তৈরি করা হয়েছে। 

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং সঞ্চালনা করেন আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।    
 

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at shoe factory in Ctg

A fire broke out at a factory that produces shoe accessories on Bayezid Bostami Road in Chattogram city this afternoon

1h ago