জিয়াউর রহমান সেক্টরের অধিনায়ক, সেক্টর কমান্ডার নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘খালেদ মোশাররফ যখন আহত হয়ে যান, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেক্টর কমান্ডার নয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, 'খালেদ মোশাররফ যখন আহত হয়ে যান, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেক্টর কমান্ডার নয়।'

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছেন। তা সবই সত্য। কিন্তু তার অবদানটা কী? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ তাকে চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠি আমার কাছে আছে। এই সংসদে সেটা তুলে ধরব। সংসদের প্রসেডিংসের পার্ট হয়ে থাকা দরকার। কর্নেল আসলাম বেগ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়াকে একটি চিঠি দেয়, সেই চিঠিতে সে লিখেছিল আপনি খুব ভালো কাজ করছেন। আমরা আপনার কাজে সন্তুষ্ট। আপনার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ দেওয়া হবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদ মোশাররফ যখন আহত হয়ে যান, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেক্টর কমান্ডার নয়।'

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'জিয়ার আমলে প্রত্যেকটি কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে। তার রেকর্ড তো থেকে যায়। সেগুলি একটু খুঁজে বের করে দেখেন।'

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এদের থেকে এখন মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। জ্ঞানের কথা শুনতে হয়। আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। আমার বাবা-মার হত্যার বিচার চেয়ে আমি মামলা করতে পারিনি। আমাদের সেই অধিকার ছিল না। হ্যাঁ, আমাদের দলের বেঈমান তো ছিলই। খন্দকার মোস্তাক তো ছিলই। এটা তো অস্বীকার করি না। আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। জিয়াউর রহমান তো খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতো।'

সরকারের সমালোচনা এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশের মানুষের একটা বদভ্যাসও আছে। কথায় কথায় হতাশ হওয়া। যতই কাজ করি, তারপরও বলে এটা হলো না কেন? ওটা হলো না কেন? আমি বলতে চাই এসব না করে আগে কী ছিল, আর এখন কী হয়েছে সেটা দেখলে তো হয়ে যায়।'

তিনি বলেন, 'মিডিয়া কী লিখলো আর টকশোতে কী বললো সেটা শুনে আমি কখনো দেশ পরিচালনা করি না। দেশ পরিচালনা করি আমার অন্তর থেকে। কারণ, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেই মানুষগুলির জন্য কী কাজ করতে হবে। সেটা আমি বাবা-মায়ের থেকে শিখেছি। আমি সেটাই কাজে লাগাই। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে কী না তা যাচাই করি। কে কী বললো, ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না। আমি তা করি না।'

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়াউর রহমানকে আসামি করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'জিয়া পঁচাত্তরের হত্যার সঙ্গে জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব রেজাউল হায়াত বলেছিলেন, মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় নামটা (আসামি হিসেবে) থাকা উচিত ছিল। কারণ জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত তা ফারুক-রশিদ নিজেরাই বলেছেন। একাধিক বইতে আছে। আর জড়িত না হলে যেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল তাদের ছেড়ে দিল কেন? জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে সবাইকে কারাগার থেকে মুক্তি দিল। সাত খুনের আসামিকে ছেড়ে দিল। স্বাধীনতা যুদ্ধই যদি করে থাকে, তাহলে একাত্তরের অগ্নিসংযোগকারী, খুনি, ধর্ষণকারীদের কেনো মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানালো। সংসদে বসালো। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করল।' 

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সংসদে বলা হয়েছে, জিয়াউর রহমান যে সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে সব থেকে বেশি হতাহত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, সে তাহলে যুদ্ধে কী কাজ করেছেন। পাকিস্তানীদের পক্ষে? যাতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করে, সেই ব্যবস্থা করেছিল কি না? সেটাই আমার প্রশ্ন। বেশি মারা যাওয়ার অর্থ এটাই দাঁড়ায়, তিনি কমান্ড করেন। সে কী কমান্ড করল যে সেখানে এত বেশি মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করলো? সেক্টরের অধিনায়কত্ব করে ক্যাজুয়ালিটি বাড়িয়ে দেওয়ার মানে কী? নিজের হাতে নিজেদের লোকদের এগিয়ে দিয়েছে মরতে।'

লাশ নিয়ে বিতর্ক 

শেখ হাসিনা বলেন, 'জিয়াউর রহমানের লাশের নামে চট্টগ্রাম থেকে একটি বাক্স সাজিয়েগুজিয়ে আনা হয়েছিল। ওই বাক্সে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না।' এ বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মীর শওকত ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে কথা উঠছে। আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সংবাদের পরে তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে একটি বাক্স আনা হলো। এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে, আর জেনারেল এরশাদ তো এই বিষয়ে বেশি পারদর্শী। সাজিয়েগুজিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো।'

তিনি বলেন, 'তখন এই পার্লামেন্টে বার বার প্রশ্ন এসেছে, যদি লাশ পাওয়া যায় তার ছবি থাকবে না কেনো? লাশ শনাক্ত করেছিল মীর শওকত। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে চিনতাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সত্যি কথা বলেন তো? বলেছিলেন লাশ কোথায় পাব? এমনটি জেনারেল এরশাদ সাহেব, তাকে আমি বললাম, আপনি যে একটা বাক্স আনলেন? লাশটা কই? আমাকে বললেন, বোন লাশ পাব কোথায়? আর কী বলব।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Why planting as many trees as possible may not be the solution to the climate crisis

The heatwave currently searing Bangladesh has led to renewed focus on reforestation efforts. On social media, calls to take up tree-planting drives, and even take on the challenge of creating a world record for planting trees are being peddled

15m ago