জাল দিয়ে মাছ নয়, পাথর আহরণ করেন তারা

নুর মোহাম্মদ (৩৬) হাতে জাল নিয়ে সাঁতরে মাঝ নদীতে ডুব দেন। পানির নিচে থাকেন ২ থেকে ৩ মিনিট। আবার জাল নিয়ে সাঁতরে চলে আসেন নদীর তীরে। তার জালে মাছ থাকে না, থাকে কিছু পাথর। এভাবে প্রতিদিন নদীতে কাটান ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় কাউয়ামারী এলাকায় ধরলা নদী থেকে জাল দিয়ে পাথর আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

নুর মোহাম্মদ (৩৬) হাতে জাল নিয়ে সাঁতরে মাঝ নদীতে ডুব দেন। পানির নিচে থাকেন ২ থেকে ৩ মিনিট। আবার জাল নিয়ে সাঁতরে চলে আসেন নদীর তীরে। তার জালে মাছ থাকে না, থাকে কিছু পাথর। এভাবে প্রতিদিন নদীতে কাটান ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কাউয়ামারী গ্রামে ধরলায় এভাবে জাল দিয়ে পাথর আহরণ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নুর মোহাম্মদ। ওই উপজেলার ১০টি গ্রামে এক হাজারের বেশি মানুষ ধরলায় জাল দিয়ে পাথর আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

নুর মোহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খুব বেশিক্ষণ পানিতে থাকতে পারি না। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা থাকতে হয়। এতে জাল দিয়ে ২০ থেকে ২৫ সিএফটি পাথর আহরণ করতে পারি।

'আমার বাবা-দাদাও এভাবে জাল দিয়ে নদী থেকে পাথর আহরণ করতেন। এটা আমার পৈতৃক পেশা। বলতে পারেন আমাদের জীবন একটা পাথরে জীবন,' যোগ করেন তিনি।

২ সন্তানের জনক নুর মোহাম্মদ জানান, নদী থেকে আহরণকৃত প্রতি সিএফটি পাথর বিক্রি হয় ২০ থেকে ২২ টাকায়। তিনি প্রতিদিন ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন।

তিনি আরও বলেন, 'নদীতে ডুব দিয়ে আমি কখনই মাছের সন্ধান করি না। পাথরের সন্ধান করি আর পাথর আহরণ করি।'

একই গ্রামের পাথর আহরণকারী সাককুল মিয়া (৪৪) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুগ যুগ ধরে এভাবে জাল দিয়ে নদী থেকে পাথর আহরণ করছি। ধরলায় প্রচুর পাথর আছে। ভারত থেকে পানির স্রোতে পাথর আসে।'

'আমাদের উপজেলায় এক হাজারের বেশি মানুষ জাল দিয়ে নদী থেকে পাথর আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কাজের সুযোগ কম। তাই নদী থেকে পাথর আহরণকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। গড়ে প্রতিদিন ৪০০ টাকা ৫০০ টাকা আয় করি। সংসারে চালাতে কষ্ট হয়।'

শ্রীরামপুর গ্রামের জাননু মিয়া (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানির নিচে থাকা খুব কষ্টের। তবে, অভ্যাস হয়ে গেছে। আমরা পাথর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।'

তিনি আরও বলেন, 'নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে চলে যাই। জাল সঙ্গে নিয়ে পানিতে ডুব দিয়ে পাথর তুলে আনি।'

'বাবার কাছ থেকে নদী থেকে জাল দিয়ে পাথর আহরণ পদ্ধতি শিখেছি। অনেক পরিশ্রমের কাজ,' বললেন ঘেংতি এলাকার পাথর আহরণকারী ইসমাইল হোসেন (৪৬)।

বুড়িমারী এলাকার সালাম মিয়া (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টি আসলে বেশিক্ষণ পানিতে থাকতে পারি না। প্রবল স্রোত। ধরলায় বালুর সঙ্গে পাথর মিশে থাকে। শুধু পাথর নিয়ে নদীর কিনারায় বা নৌকায় চলে আসি।'

কাউয়ামারী এলাকার পাথর ব্যবসায়ী সাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধরলা থেকে জাল নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার সিএফটি পাথর আহরণ করে থাকেন। এসব পাথর কেনার জন্যে আরও ৪০ থেকে ৪৫ জন ব্যবসায়ী আছেন। আমরা ২০-২২ টাকা সিএফটি দরে পাথর কিনে নিই। পরে প্রক্রিয়া শেষে প্রতি সিএফটি ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি করি।'

'দেশের নানা স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাথর কিনেন। আমরা মাঝে-মধ্যে পাথর আহরণকারীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকি,' যোগ করেন সাজু আহমেদ।

পাটগ্রাম উপজেলায় ধরলা থেকে জাল দিয়ে পাথর আহরণ ও এসব পাথর প্রক্রিয়াসহ কেনাবেচার সঙ্গে তিন হাজারের বেশি পরিবার জড়িয়ে আছে বলে জানান এই পাথর ব্যবসায়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Tehran signals no retaliation against Israel after drones attack Iran

Explosions echoed over an Iranian city on Friday in what sources described as an Israeli attack, but Tehran played down the incident and indicated it had no plans for retaliation - a response that appeared gauged towards averting region-wide war.

1h ago