‘জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ভারতের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের সহযোগিতা করেছে’
জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ভারতের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার মুম্বাই হামলার ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে 'উপমহাদেশে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাস দমন: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, '২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে ২২টি দেশের ১৭৫ জন নাগরিককে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা কোন দেশ থেকে কাদের সহায়তায় এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত করে তা আমাদের সবার জানা।'
'ভারতের মতো বাংলাদেশও বারবার জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২০০১ সালের পর বিএনপি আমলে জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে লালন পালন করা হয়। তারা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার কার্যক্রম চালায়। বাংলাদেশের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে জঙ্গিরা বৈশাখী উৎসব থেকে শুরু করে মসজিদ, মন্দির, মঠ ও গির্জায় হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করে।'
'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর জঙ্গিদের শক্ত হতে দমন করেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা করেন,' যোগ করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছে জঙ্গি হামলা প্রতিহত করে তাদের পাকড়াও করতে। আমরাও ভারতকে তথ্য দিয়ে জঙ্গিদের আটকে সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখব এবং জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও প্রশিক্ষণদাতা পাকিস্তানের সব চক্রান্ত প্রতিহত করে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখব।'
সভায় ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, '২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইতে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করা খুবই কষ্টকর। কিছু অস্ত্রধারী পাকিস্তানি সন্ত্রাসী দেশি ও বিদেশি সাধারণ নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত করে আইএসআইয়ের মদদপুষ্ট লস্কর-ই-তৈয়বা। এ হামলার মাধ্যমে তারা শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ভারতসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসীরা শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করতে পহেলা বৈশাখসহ সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সমাবেশে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি এবং কখনো পারবে না।'
আলোচনা সভায় নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, '২০০১ এ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর পশ্চিমের বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক পাকিস্তানকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র বলেছেন। আমেরিকার সিনেটর ল্যারি প্রেসলিও বলেছেন যে সন্ত্রাস সম্পর্কে পাকিস্তান যদি নীতি পরিবর্তন না করে এটিকে অবশ্যই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। পাকিস্তানকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তান কীভাবে তালেবান ও আল কায়দার মতো সন্ত্রাসী জিহাদি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এ নিয়ে পাকিস্তানি গবেষকরাও প্রচুর লিখেছেন। পাকিস্তান হচ্ছে বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাস উৎপাদনকারী, বিপণনকারী ও রপ্তানিকারী দেশ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জঙ্গিদের অর্থায়নের সময় ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের কর্মকর্তারা ধরা পড়েছেন।'
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী সংসদ সদস্য আরমা দত্ত প্রমুখ।
Comments