ঘাট সরালে পদ্মা সেতুর নদীশাসন ব্যাহত হতে পারে: সেতু কর্তৃপক্ষ

ফেরির ধাক্কা থেকে সেতুর পিলার বাঁচাতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ পদ্মাসেতুর জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমান লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাট স্থানান্তর করে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় সরানো হলে সেখানে নদী শাসন কাজের ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে তারা।
স্টার ফাইল ফটো

ফেরির ধাক্কা থেকে সেতুর পিলার বাঁচাতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ পদ্মা সেতুর জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমান লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাট স্থানান্তর করে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় সরানো হলে সেখানে নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে তারা।

আজ সোমবার পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুর কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ফেরিঘাট স্থানান্তর করতে এক বছর সময় লেগে যাবে। আর, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে খুব শিগগিরই।

বিআইডব্লিউটিসির ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশের ব্যাপারে তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে উত্তর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পদ্মাসেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা এড়াতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ জানায়।

পরে বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলামের সই করা একটি চিঠি পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ঘাট স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

পদ্মাসেতুর প্রকৌশল সূত্র জানায়, চলমান বর্ষা মৌসুমের জন্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজ বন্ধ আছে। ধারণা করা যাচ্ছে, দুই মাস পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শুকনো মৌসুম শুরু হলে নদী শাসনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু, পদ্মাসেতুর আওতাধীন এলাকায় শিমুলিয়া ঘাট স্থানান্তর করা হলে, তখন নদী শাসন কাজের ক্ষতি হবে। বর্ষা মৌসুমের সময় শুকনো মৌসুমে কাজ করার যে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে।

ঘাট স্থানান্তর কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে উল্লেখ করে সূত্র আরও জানায়, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে এগারো মাস লাগবে। সে হিসাবে ঘাট স্থানান্তর কাজ শেষ হওয়ার আগেই, পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত নদী শাসন কাজের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শরফুল ইসলাম সরকার জানান, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাট এলাকাটি পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষের। চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোকে নদী শাসনের জন্য এলাকাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করে তারপর পদ্মাসেতুকে বুঝিয়ে দিবে।

২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, বর্তমান শিমুলিয়াঘাট থেকে যদি পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ঘাট স্থানান্তর করা হয়, তবে পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে। তাছাড়া ওই অংশে নদীতে ফেরি চলাচলের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বার্জ, ড্রেজারসহ মালামাল বহন করে চলাচল করতে পারবে না।

তাছাড়া যদি নদী ভাঙন শুরু হয় তাহলে মাওয়া প্রান্তে আরো ঝুঁকি তৈরি হবে। এছাড়া, বাংলাবাজার ঘাটকে মাঝিকান্দি ঘাটে স্থানান্তর করতে হলে অনেক সুযোগ সুবিধা লাগবে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে নদী শাসন কাজের সুবিধার জন্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে বাংলাবাজার নেওয়া স্থানান্তর হয়েছিল বলে জানান তিনি।

মো. শরফুল ইসলাম সরকার আরও জানান, ঘাট স্থানান্তরের কাজটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। এর জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, বালু ভরাটসহ বেশ কিছু কাজ করতে হয়। ঘাট স্থানান্তরের কাজ শেষ করতে করতে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

ফেরির ধাক্কা থেকে পিলারকে বাঁচাতে যেসব সুপারিশ নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে চলমান বর্ষা মৌসুমে সতর্কভাবে ফেরি পরিচালনা করা বেশি কার্যকর হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঘাট স্থানান্তরের কারণে নদী শাসন কাজও বাধাগ্রস্ত হতে পারে স্বীকার করে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) এস এম আশিকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পদ্মাসেতুর নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে ফেরি পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। প্রাথমিকভাবে বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে পুরাতন ফেরি সরিয়ে নতুন ফেরি আনা হবে। তীব্র স্রোত প্রতিরোধ করার মতো ফেরি এ নৌপথে নেই।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ঘাট সরানোর সুপারিশের চিঠি পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন যদি মন্ত্রণালয় প্রয়োজন মনে করে তাহলে ঘাট সরানোর সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি জানান, পদ্মাসেতু চালু হতে যাচ্ছে শিগগির। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে ঘাট স্থানান্তর অনেক অর্থের ব্যাপার। ঘাট না সরিয়েও যেখানে স্রোত কম সেসব পিলার দিয়ে ফেরি চলাচল করতে পারে এমন বিকল্প ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: Bangladesh Bank

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

2h ago