লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম

বৃষ্টির দেখা নেই, সেচের পানিতে চলছে আমন চাষ

লালমনিরহাট সদরের চওড়া গ্রামের কৃষক সুরেন্দ্র নাথ বর্মণ এ বছর ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সেই অনুপাতে আমনের বীজতলাও প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু, বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় তিনি বেশ বিপদে পড়েছেন। বীজতলায় আমনের চারা লালচে হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারলে এসব চারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই, বৃষ্টির আশা ছেড়ে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে তার বাড়তি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
বৃষ্টির অভাবে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নতুন চর এলাকায় আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট সদরের চওড়া গ্রামের কৃষক সুরেন্দ্র নাথ বর্মণ এ বছর ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সেই অনুপাতে আমনের বীজতলাও প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু, বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় তিনি বেশ বিপদে পড়েছেন। বীজতলায় আমনের চারা লালচে হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারলে এসব চারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই, বৃষ্টির আশা ছেড়ে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে তার বাড়তি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

সুরেন্দ্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছর বৃষ্টির পানিতে জমি হালচাষ করে আমন ধানের চারা রোপণ করি। কিন্তু, এবার গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনও বৃষ্টি নেই। খরা চলছে।'

এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়তে হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সাধারণত এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আমন ধানের চাষ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি না হওয়াটা কৃষির জন্য খুবই অশুভ বিষয়।'

একই গ্রামের কৃষক মহসিন আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনিও বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে করতে বাধ্য হয়ে ডিজেল চালিত শ্যালও মেশিন দিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করছেন আমন চাষের জন্য।

তিনি বলেন, 'আমনের চাষ সবচেয়ে লাভজনক। কিন্তু, সময়মতও বৃষ্টি না হওয়ায় এবার বিপাকে পড়েছি। সেচের পানি দিয়ে ধান চাষে বাড়তি খরচ হচ্ছে।'

এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়ির-হাট গ্রামের কৃষক আবু তালে বলেন, 'বর্ষাকালে বৃষ্টি নেই, খরা চলছে। আমরা কৃষকরা এটা ভাবতেই পারছি না। সময়মতও রোপণ করা না হলে আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। এরিমধ্যে অনেক চারা নষ্টও হয়ে গেছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুড়িগ্রামে এক লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এজন্য বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে সাত হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে। লালমনিরহাটে ৮৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে চার হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিলিমিটার। কিন্তু, গত বছর এ সময়ে বৃষ্টির রেকর্ড ছিল ৮৮৬ মিলিমিটার।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামিল আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,  'এ সময় যে পরিমাণে বৃষ্টিপাত প্রয়োজন তার ১০ শতাংশও হচ্ছে না। যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই কৃষকদের সেচের পানি দিয়ে আমনের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

সময়মতও বৃষ্টিপাত না হওয়াটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, 'এ সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষি বিভাগ শঙ্কিত। সম্প্রতি ধান চাষে লাভবান হওয়ায়, কৃষকরা যে কোনও উপায়ে আমন চাষ করবেন। আপাতত সেচের পানিতে আমন চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।'

Comments

The Daily Star  | English

No insurance assets will be usable for owners’ personal loans

Insurers shall not assist company directors, shareholders, their families or other related individuals in obtaining loans from financial institutions by using company assets as collateral, according to a draft amendment to Insurance Act 2010.

20m ago