তুলার বাড়তি দামে কৃষকের মুখে হাসি

গত বছর উৎপাদিত প্রতি মণ তুলা আঁশ ও বীজসহ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। এ বছর সরকারিভাবে মণ প্রতি আরও ১ হাজার ২০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিজের জমিতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধুলারকুটি গ্রামের একজন তুলা চাষি। ছবি: স্টার

গত বছর উৎপাদিত প্রতি মণ তুলা আঁশ ও বীজসহ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। এ বছর সরকারিভাবে মণ প্রতি আরও ১ হাজার ২০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

তুলার এই বাড়তি দাম পেয়ে খুশি রংপুর অঞ্চলের তুলা চাষিরা। তুলা উৎপাদনে তাদের আগ্রহও বাড়ছে অনেকগুণ।

রংপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর রংপুরের ৮ জেলায় ৭ হাজার ২০০ জন কৃষক ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। গত বছর ৬ হাজার ৬০০ জন কৃষক তুলা চাষ করেছিলেন ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।

এ অঞ্চলে গত বছর তুলা উৎপাদন হয়েছিল ৬ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে তুলা আঁশ ছিল ১৪ হাজার ৪২১ বেল (১৪০ কেজিতে ১ বেল)।

চলতি বছর তুলার ফলন আশানুরূপ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। উৎপাদিত তুলা থেকে তুলা আঁশ পাওয়া যেতে পারে প্রায় ১৭ হাজার ১৪০ বেল।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে তুলার চাহিদা ৭৩ থেকে ৭৪ লাখ বেল। তবে, বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার বেল। চাহিদার বাকি অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে প্রতি বছর তুলা আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি হেক্টর জমি থেকে তুলা উৎপাদন হচ্ছে ৬ থেকে ৭ বেল।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধুলারকুটি গ্রামের তুলা চাষি হযরত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ২ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১১ মণ তুলা পেয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর ২ বিঘা জমি থেকে ১৭ মণ তুলা পেয়েছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। গত বছর ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে তুলা বিক্রি করলেও এবার বিক্রি করছি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে।'

'এ বছর তুলার আশানুরূপ ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় আমরা খুশি। আগামী বছর আমি ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

একই গ্রামের তুলা চাষি আব্দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তুলা চাষ করতে আমরা স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছি। এ ছাড়া তুলা বোর্ডের কর্মকর্তারা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন এবং দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।'

এ বছর দেড় বিঘা জমিতে তুলে চাষ করলেও আগামী বছর ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করবেন জানান এই কৃষক।

একই উপজেলার তুলা চাষি কুরাশাফেরুয়া গ্রামের আজিজুল হক বলেন, 'তুলা বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সরাসরি আমাদের কাছ থেকে তুলা কিনছেন। বাজার এমন থাকলে আরও অনেকই তুলা চাষে আগ্রহী হবেন এবং দেশে তুলার চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবেন।'

রংপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তুলা ইউনিট অফিসার লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগের তুলনায় তুলার উৎপাদন বেড়েছে এবং দামও বেড়েছে। তুলা চাষ করলে কৃষি জমির উর্বরতা বাড়ে। তুলা চাষ করতে আগ্রহী কৃষকদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তাদেরকে তুলা চাষ পদ্ধতি শেখানো হয় এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের খোঁজখবর রাখা হয়। রংপুর অঞ্চলে আশানুরূপ তুলা উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তুলা চাষে আমরা কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছি।'

রংপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফজলে রাব্বি বলেন, 'বর্তমানে তুলা উৎপাদন লাভজনক। কৃষকদের তুলা উৎপাদনে আগ্রহী করা হচ্ছে। কৃষকও তুলা চাষে আশানুরূপ লাভ দেখতে পেয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছর থেকে বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জমিতে তুলা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশে তুলার চাষ বাড়লে আমদানি নির্ভরতা কমতে থাকবে। এতে দেশ ও কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তুলার আঁশ দিয়ে তৈরি হয় সুতা আর তুলা বীজ থেকে তৈরি হয় তৈল। অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরাও মাঠে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে মতবিনিময় করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Results of DU admission tests of all units published

There was a pass rate of 8.89 percent in A unit [Science] , 10.07 percent in B unit, 13.3 percent in C unit (Business), and 11.75 percent in Cha Unit (Fine Arts)

16m ago