‘উৎসবে যারা আনন্দ তৈরি করে, তাদেরই নিরানন্দ জীবন’

শারদীয় দূর্গোৎসবের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে রাজবাড়ীতে। এবার জেলায় ৪৪১টি মণ্ডপে পূজা হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করলেও প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন এবারও করোনার কারণে খুব একটা আয় নেই তাদের।
ছবি: স্টার

শারদীয় দূর্গোৎসবের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে রাজবাড়ীতে। এবার জেলায় ৪৪১টি মণ্ডপে পূজা হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করলেও প্রতিমা শিল্পীরা বলছেন এবারও করোনার কারণে খুব একটা আয় নেই তাদের।

দাদশী ইউনিয়নে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন দুলাল পাল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে পূজার আড়ম্বর না থাকায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল। এবারও মানুষের হাতে টাকা না থাকায় পূজার খরচ কমাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'এবার পূজায় দুটি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। তবে বাজেট খুব কম। ৫০ হাজার টাকা বাজেটে প্রতিমা তৈরি করতে প্রতিটি মণ্ডপে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা কারিগরদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হয়। সারা বছরে আমাদের আয়ের অন্যতম উৎস দুর্গাপূজা। এতো কম মজুরিতে সংসার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন। দিন দিন এই পেশায় যুক্ত থাকা আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠছে।'

দুলাল পালের সহযোগী উত্তম বলেন, 'প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের জনপ্রিয়তার কারণে এমনিতেই মাটির বাসন কেউ ব্যবহার করে না। আমরা প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পাই তাতে সংসার চলে না। কোনো শ্রমিক দৈনিক ৫০০ টাকা করে মজুরি পেলেও ১৫ দিনে তার ৭-৮ হাজার টাকা আয় হয়। ২০ হাজার টাকা বাজেটে কোনো মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির অর্ডার নিলে যাতায়াত খরচ, মাটির খরচ, রং খরচ এসব শেষে আমাদের হাতে আর কয় টাকা থাকে!'

পারিবারিকভাবে তারা এই পেশায় এলেও আর্থিক অনটনের কারণে নতুন প্রজন্মের কেউই আর এই পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানান তারা। 

ছবি: স্টার

কুটির হাটের প্রতিমার তৈরির কারিগর পলাশ বলেন, 'দিন দিন আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমাদের সন্তানরা আর এই পেশায় আগ্রহী হচ্ছে না। তার ওপর এখন থিম পূজার নামে মাটির পরিবর্তে শোলা, ধান, প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন উপকরণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিতে মাটির ব্যবহার কমে গেলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।'

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যে অনুদান পাওয়ার কথা সেটা পেয়ে থাকি। কিন্তু প্রতিমা শিল্পীরা নায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিমা তৈরির যারা কারিগর, উৎসবে তারাই আনন্দ তৈরি করে। কিন্তু তাদের নিজেদের এখন নিরানন্দ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।'

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার উৎসব পালনের জন্য মণ্ডপগুলোতে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে চিত্রশিল্পী তরুণ ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিষ্ঠানিকভাবে বেড়ে ওঠেন না, এ কারণে তারা কখনও কারো নজরেও থাকেন না। তারা মূলত জাত শিল্পী। তাদের কোনো প্রশিক্ষক নেই। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করে যে সম্মানী পায় তা খুব লজ্জাজনক। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা তারা নিজেরা ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: Bangladesh Bank

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

2h ago