ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি: আইনমন্ত্রী

সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
ফাইল ছবি।

সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির ওই পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রকেটশন দেওয়া হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিলটি পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, খসড়া আইনটি 'তড়িঘড়ি করে' আনা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন নয়, এটা সত্য। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয় এটাও বলেছি। কারণ আমি বলেছিলাম, করোনার সময় যে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে এর মধ্যে এই আইন পাস করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, সুজনের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাসের প্রস্তাব করেন। আমি আইনটি পাস করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অর্ডিনেন্স করে এটা করার প্রস্তাবও দেন। আমি বললাম সংসদকে পাশ কাটিয়ে এই আইন করবো না। সংসদে নেওয়া ছাড়া এ আইন আমরা করবো না।

এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপ করেছে গিয়েছে যারা যাননি তারা সবাই নির্বাচন কমিশন নতুন আইনের মাধ্যমে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্য কোনোভাবে গঠন করা যাবে না। গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয় তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন।

তিনি বলেন, এই আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসল্লা সেটা আর থাকেনি। সে জন্যই এখন তারা উঠে পড়ে লেগেছেন এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন। তারা বলছেন, এটা ইসি করার আইন হয়নি। হয়েছে সার্চ কমিটি গঠন করার আইন।

আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিলে। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত ২ কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো ১০ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক কমপ্লেইন থাকে।

তিনি বলেন, ২ জন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি যে, সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিযোগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।

বক্তব্য একপাঞ্জ বিষয়ে বিএনপির হারুনের বক্তব্যর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, উনি আগে অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেছিলেন বলেই তা এক্সপাঞ্জ হয়। আমি অসংসদীয় ভাষায় কোনো কথা বলিনি। আমারটা এক্সপাঞ্জ হবে কেন? আমি ভাষা যেটা ব্যবহার করি তা হলো বাংলার ক্লোকিয়াল ল্যাঞ্জুয়েজ। বাংলার জনগণ যেন শুনে বুঝতে পারেন।

এর আগে হারুন আইনটি উত্থাপনের দিনে আইনমন্ত্রী আইনের ভাষায় কথা বলেননি অভিযোগ করে ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি করেন এবং আইনের ভাষায় কথা বলার অনুরোধ করেন।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, উনারা তো তালগাছ চান। উনারা কিছুই মানেন না যতক্ষণ তালগাছটা উনাদের না হয়। এই সংসদই বলেছিল তত্ত্ববধায়ক সরকার হবে ৩ টার্মের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলা হলে কোর্ট দুটি বিধানকেই অবৈধ ঘোষণা করে। তারপরও উনারা এটার কথা বলবেন। উনারা আদালতের রায়ও মানেন না। উনাদের কথা হলো যেটা কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের ঐক্যমতের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্যমত করতে হলে উনাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্য হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট উনারা মানে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। সত্য হলো—উনারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐক্যমতে আসবো। এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমরা ঐক্যমতে আসবো।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের ২ কমিশনকে হেফাজত প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রকেটশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যে কোনো বৈধ কাজ যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্ত ক্ষরণ করিয়েছে। ২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের শোনাতে আসবেন না। আমরা ওই পথে হাঁটি না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রকেটশন দেওয়া হয়নি। সেই কারণে তাদের যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তাদের বলবো এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করবো। না হলে সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করবো এসব প্রস্তাব ভোটে হারিয়ে দেওয়ার জন্য।

পরে সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর বলা হয়েছিল ৩ মেয়াদে এটি থাকবে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল সংসদ চাইলে দুটি নির্বাচন হতে পারে। সংসদ এটি চায়নি। 
সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি যতগুলো সংশোধনী গ্রহণ করেছেন, তার মনে হয় এর আগে কখনো এত বেশি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়নি।

এর আগে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার আনতে চায়। তাদের সংসদ সদস্যরা এখানে সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করা তাদের উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানে কি না, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা, যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এসব মানে কি না স্পষ্ট করতে হবে। এসব না মানলে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে না।

ইনু বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অনেক ফাঁক-ফোকড় ছিল। এর মধ্য দিয়ে ইয়াজ উদ্দীনকে ক্ষমতায় এনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছুতোয় বিএনপি একটি অস্বাভাবিক সরকার গঠন করতে চায়। অনুসন্ধান কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন তাদের নাম ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটিকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রপতি কোনো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে একটি ইল্যুশন হিসেবে সামনে আনা হয়।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন রজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি ছিল। এখন সে ঘাটতি আরও অনেক বেড়েছে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব নির্বাচন মাগুরার নির্বাচনের চেয়ে অনেক খারাপ হয়। সুতরাং ৯৬ সালের চেয়ে এখন তত্ত্বাবধাক সরকার আরও বেশি দরকার।

রুমিন বলেন, আদালত বলেছিল সংসদ চাইলে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। সংবিধান সংশোধন কমিটিতে সব দল এই ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল। পরে অজানা কারণে এটি বাতিল করা হয়। এখন যে পরিস্থিতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনই সম্ভব না।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। এটি একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা।

সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদার বক্তব্যের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক বলেন, যে আমলা এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে আরামে চাকরি করেছেন, পরে চাকরি শেষে আবার ৫ বছরের জন্য সিইসি হয়েছেন। তারা উপরেরটা খান, নিচেরটাও খান।

ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, যারা দ্রুত আইন দাবি জানিয়েছিলেন, আইনটি করার উদ্যোগ নেওয়ার পর তারাই আবার উল্টে গেলেন। তিনি অনুসন্ধান কমিটি যেসব নাম প্রস্তাব করবে সেগুলো জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিলেন।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে শ্যাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই কাজ করতে হবে। আইনে না থাকলেও যেটা হবে তা হলো, অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। সে প্যানেল যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি ৫ জন নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। তবে এটা যে অসাংবিধানিক তা নয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আইনটি করার জন্য সময় প্রয়োজন। এই আইনটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। এ ছাড়া, অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো দেবে সেগুলো জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। এটা হলে তা অনেক ইনক্লুসিভ হবে।

এ ছাড়া, অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো প্রস্তাব করবে সেগুলো অন্তত প্রকাশ করা এবং এরপর জনমত বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন সেই ব্যবস্থা করারও দাবি জানান মেনন।

মেনন বলেন, বিএনপি আইন নয় সরকারের উৎখাত চায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ নেই।

বিএনপির হারুনুর রশীদ একটি নির্বাচন কমিশন আইন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব ইসিকে সহায়তা করা। কিন্তু না করলে কী হবে তা বলা নেই। এসব নিয়ে একটি পুরো আইন হওয়া উচিত।

এই আইনটিকে সরকারের কূটকৌশল আখ্যা দিয়ে হারুন বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আগামীতে দিনের বেলা নতুন কৌশলে নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে। এখন যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলোচনার ব্যবস্তা করার দাবি জানান তিনি।

বাছাই কমিটি পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই ইসির সুবিধাভোগী ছাড়া সবাই বলবে তারা ব্যর্থ। কমিশনের সরকারের আকাঙ্ক্ষার বাইরে কিছু করতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে যে আইন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি এই আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটি বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অবাস্তব।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে এই আইন করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই আইনে প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির সদস্য নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার বিধান যুক্ত করার দাবি করেন এই জাপা এমপি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন শতভাগ আমলা নির্ভর উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশে কি বিচারপতি ও আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মতো কেউ নেই? রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের কি বিশ্বাস করা যায় না? আওয়ামী লীগ এত বড় রাজনৈতিক দল, আপনাদের ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হয়নি, তাহলে আপনারাও কেন বিচারপতি ও আমলার ওপর নির্ভর করবেন? চুন্নু তার বক্তব্যে স্পিকারের মাধ্যমে মনোনয়নে ‍২ জন সংসদ সদস্যকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, সঠিকভাবে নির্বাচন না হওয়ার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

তিনি বলেন, ইসি গঠনে সংবিধানে আইন করার কথা বলা আছে কিন্তু অংশীজনের সঙ্গে কথা না বলে তাড়াহুড়া করে আইন করা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। এই আইনটি কেবল বিএনপি নয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কঠোর সমালোচনা করেছেন। এটাকে ইসি গঠনের আইন না বলে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলা যেতে পারে।

রুমিন বলেন, সার্চ কমিটিতে সরকারি দল, সংসদের প্রধান বিরোধী দল ও তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন করে প্রতিনিধি থাকলে স্বচ্ছতা থাকতো। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে কেবল সরকারের ইচ্ছায় ইসি গঠন হবে। ওই কমিশন স্বাধীন হবে না, হবে সরকারের নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বিএনপির হারুনুর রশিদ বলেন, জনগণ মনে করে, সরকার আইন করার নামে তাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে। এই আইনটির সঙ্গে ২০১৭ সালের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপনে খুব একটা অমিল নেই। কোনো আইন মানুষের অকল্যাণে হলে তা করার থেকে না করাই ভালো। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতার একটি হচ্ছে সরকারের অনুগত হওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সার্চ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদেরও বিতর্কিত করা হবে।

এই আইনে জনগণ হতাশ। তারা এটা চায় না। তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৫-৯৬ ও ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলেন, তারা সেটা চায়। অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। প্রমাণ করতে পারবেন না গত দুটি কমিশন জনগণকে আস্থাশীল করতে পেরেছে। তাই বলবো নির্বাচন কমিশনের নামে নাটক-প্রহসন বাদ দিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার দ্বার উন্মোচন করুন। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো, আপনি উদ্যোগ নিন। সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে কীভাবে নির্বাচনটি করবেন সেটা ঠিক করুন। সরকারে থাকতে এক রকম বক্তব্য আর বিরোধী দলে গেলে অন্য রকম বক্তব্য ঠিন নয়।

জাপার রওশন আরা মান্নান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার এই আইনটি করছে। কিন্তু সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ রেখে কীভাবে আইনটি হবে জানি না। আলোচনা ছাড়া তাড়াহুড়া করে আইনটি পাস করলে দেশে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আশ করবো স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বজায় রেখে সরকার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠন করবেন। তাহলে দেশ শান্ত থাকবে।

জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধান সংশোধন না করে এই আইনটি পাস হলে তা অসাংবিধানিক হবে। এই আইনের বিষয়ে অংশীজনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

আইনটি প্রণয়ন ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেরিতে হলেও আইনটি হচ্ছে। অনেকে আইনটিকে তড়িঘড়ির কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে তো বলা হয়েছিল ১৫ দিনে এই আইন করা সম্ভব। তাহলে কেন তড়িঘড়ির প্রশ্ন আসছে? আমাদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা না আসা পর্যন্ত আইন করে কিছু হবে না। 

সার্চ কমিটি সদস্য সংসদ থেকে এলে বিতর্ক হতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই আইনের বিষয়ে মানুষের কৌতুহল রয়েছে। সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। এই আইনটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আরও সমৃদ্ধ হতো। এই আইনে বিগত দুটি কমিশনকে যে হেফাজত দেওয়া হয়েছে এটার দরকার ছিল না। এখানে তত্ত্বাধবায়ক সরকার আনার কথা বলে বিএনপি কোন পাগল আর কোন শিশুকে আনতে চায় সেটা বুঝতে পারছি না।

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at shoe factory in Ctg

A fire broke out at a factory that produces shoe accessories on Bayezid Bostami Road in Chattogram city this afternoon

47m ago