আমরা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরও জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
pm.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তি ও শান্তির দূত। তিনি তার এক ভাষণে বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত—শোষক ও শোষিত। আমি শষিতের পক্ষে। তিনি সব সময় শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়ত মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করেছিলেন বিশ্ব শান্তি পরিষদ জাতির পিতাকে 'জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার'-এ ভূষিত করে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে আমরা জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করি এবং জাতিসংঘে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়' এই নীতি তিনি ঘোষণা করেছিলেন। যে নীতি আমরা এখনো মেনে চলি। বাংলাদেশ সব সময় চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই।  জাতির পিতার শান্তি সেনানীরূপে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় 'ব্লু হেলমেট' পরিবারের সদস্য হয়। আজ আমরা 'সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ' হিসেবে গৌরবের ৩৪ বছর উদযাপন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গত ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শান্তিরক্ষী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বজনবিদিত। ৯৬ সালে প্রায় ২১ বছর পর আমি যখন সরকার গঠন করি, তখনই জানি আমাদের দেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আমাদের সদস্যরা যাচ্ছেন; সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী থেকে। তাই তারা যাতে উপযুক্তভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য, যিনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশ সম্পর্কে জানা, সেখানে কী করণীয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে জন্য আমি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেই। জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। একইসঙ্গে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।

সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিগুলো নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছি। 'পিপল পিস প্রোগ্রেস: দ্য পাওয়ার অব পার্টনারশিপ'  ২০২২ সালের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্যকে আমরা সামনে রেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরও জোড়ালো ভূমিকা পালন করবে সেই অঙ্গীকার আমরা করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এ মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২২১টি দেশের ৭৫ হাজার ৫১৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮২৫ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের ১১৯ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। আমি জেনে আনন্দিত যে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী তাদের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে চলেছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নিজেই বিশেষভাবে আমাকে বলেছেন, তিনি আরও বেশি নারী সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনের চান। আমি বলেছি, আমরা সব সময় প্রস্তুত।

শেখ হাসিনা জানান, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৩৪টি দেশে ৫৫টি মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৯টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিভিন্ন মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দাযিত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বর্তমানে জাতিসংঘের পিস-বিল্ডিং কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে এনে আপনারা ওইসব দেশের জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীদের একটা বিশেষ গুণাবলী হলো, শুধুমাত্র শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন না, অনেক সামাজিক দায়িত্বও আপনারা পালন করেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে শহীদদের স্মরণ করে এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জানি আপনজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, কত নির্মম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সর্বমোট ১৬১ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১ বছরে ২ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর ২ জন শহীদ শান্তিরক্ষী পরিবার এবং ১৪ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হলো। আমি তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

বাংলাদেশ সব সময়ই শান্তির পক্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘে আমাদের উত্থাপিত 'শান্তির সংস্কৃতি' শীর্ষক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তখন থেকে প্রতি বছর এটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে পিস কিপিং অপারেশন ট্রোনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ২০০২ সালে এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, বিপসট' হিসেবে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটের মর্যাদা পায়। বিশ্বে এটি বর্তমানে শান্তিরক্ষীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এই ইনস্টিটিউট স্থাপন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সব শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব-সততা বজায় রেখে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখার যেমন চেষ্টা করবেন, দেশের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সেভাবে আপনারা কাজ করবেন সেটাই আমরা চাই। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনে আরও শান্তিরক্ষী পাঠাতে আমরা প্রস্তুত। বিশ্ব করোনাভাইরাসের মতো মহামারি অতিক্রম করতে করতে আরেকটা যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে, যা আজকে বিশ্বে অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সেটাই আমাদের কাম্য—বলেন শেখ হাসিনা।

Comments

The Daily Star  | English
IMF lowers Bangladesh’s economic growth

IMF calls for smaller budget amid low revenue receipts

The IMF mission suggested that the upcoming budget, which will be unveiled in the first week of June, should be smaller than the projection, citing a low revenue collection, according to a number of finance ministry officials who attended the meeting.

1h ago