সুতিজালে নদী প্রবাহে বাধা: জরিমানা মাত্র ৫ হাজার টাকা

নাটোরের সিংড়ায় নদী এবং খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে সুতিজাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে। এভাবে নদীর গতিপথে বাধা তৈরি হওয়ায় সিংড়া এলাকায় প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। বর্ষার পানি নামতে দেরি হওয়ায় বিলগুলোতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা।
sutijal_27sep21.jpg
ছবি: বুলবুল আহমেদ/স্টার

নাটোরের সিংড়ায় নদী এবং খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে সুতিজাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে। এভাবে নদীর গতিপথে বাধা তৈরি হওয়ায় সিংড়া এলাকায় প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। বর্ষার পানি নামতে দেরি হওয়ায় বিলগুলোতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা।

সিংড়া উপজেলার নিংগইন, বখতারপুর, ঢাকঢোর ডাঙ্গাপাড়া, জামতৈল, বড়িয়া, রাণীনগর, সাতপকিুরিয়া, দুর্গাপুর, পাটকৈল, শেরকোলসহ প্রায় ২০টি জায়গায় আত্রাই, নাগরসহ বিভিন্ন নদ-নদী ও খালে সুতিজালে মাছ শিকার চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সিংড়ার বখতারপুরে অবৈধ সুতিজালের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার অভিযান চালিয়ে পুলিশ শ্রী নিবাস হালদার নামে একজনকে আটক করে। কিছুক্ষণ পর ইউএনও এস এম সামিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাকিবুল হাসান আজ রানীনগর স্লুইসগেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন।

সুতিজাল ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি সুতিজালে প্রতিদিন ১ থেকে ৫ লাখ টাকার মাছ ধরা পড়ে। তাই জরিমানা দিয়ে অপরাধীরা কিছু দিনের মধ্যে একই কাজে জড়াচ্ছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য অফিস এ বছর ৪৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টি ঘটনায় ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় সুতিজালগুলো কেটে ভাসিয়ে দিয়েই অভিযান শেষ করা হয়েছে।

সিংড়া উপজেলার তেলীগ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রভাবশালীদের সুতিজালের কারণে চলনবিলে প্রায় প্রতিবছর বন্যা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরাধীদের নামকাওয়াস্তে জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছে। এই সুতিজালের কারণে পানির চাপে বখতারপুর ব্রিজ ভেঙে গেছে। এর ফলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

সিংড়া উপজেলার চুমনবাটি এলাকার রুবেল শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করেইে এসব সুতিজাল চলে। প্রশাসন জাল তুলে নিয়ে যাওয়ার পরদিন আবার সেখানে জাল বসে। এটা বন্ধ করতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

নাটোরে সিংড়া পৌরসভার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুতিজালের কারণে গত বছর আমার বাড়ির ২০ শতাংশ জায়গা বিলীন হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে সুতিজালের মালিকরা নদীতে ক্রংক্রিটের দেয়াল তৈরি করে সুতিজাল দিচ্ছে। প্রশাসন যেভাবে সামান্য দণ্ড দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে এটা স্পষ্টতই দুর্নীতি।'

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও এস এম সামিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুতিজালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত কী শাস্তি দেবে সেটা আদালতের এখতিয়ার।'

ইউএনও আরও বলেন, 'আইনে যেভাবে বলা আছে আমরা সেভাবেই অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধীদের লঘুদণ্ড বা গুরুদণ্ড দেওয়ার বিষয় নয়। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এমন নয় যে আমাদের ইন্ধনে এটা চলছে।'

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাটোর অঞ্চলে সুতিজাল এটি বড় সমস্যা। এটা বড় ধরনের অপরাধ। সুতিজাল দিয়ে যারা পানিপ্রবাহে বাধা দিচ্ছে তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হবে।' ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার ব্যাপারে স্থানীয়দের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত যেন সর্বোচ্চ সাজা দেন সেই বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।'

নাটোরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুতিজালে বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়, নিয়মিত মামলাও হবে। ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া না গেলে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করবে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

2h ago