সিসিটিভি ক্যামেরায় ‘জুম’ বা ‘মোশন ডিটেক্ট’ হয়?
কুমিল্লায় নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে গত ১৩ অক্টোবর পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। পুলিশ গতকাল বুধবার ওই পূজামণ্ডপের ৫০০ গজ দূরের দারোগা বাড়ি মাজার ও মসজিদ এলাকার কিছু সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে।
ফুটেজে দেখা যায়, মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক যুবক। তার নাম ইকবাল হোসেন (৩০) বলেও জানায় পুলিশ।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে নানাবিধ আলোচনা চলছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, কেন ফুটেজ পেতে ৭ দিন সময় লেগে গেল? সাধারণত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জুম হয় না। এক্ষেত্রে ইকবালের চলাচল অনুযায়ী ক্যামেরা নড়াচড়া করছে, জুম হচ্ছে কীভাবে?
এ বিষয়গুলো নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে কুমিল্লার পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঘটনার পরদিন ১৪ অক্টোবর পুলিশের হাতে এই সিসিটিভি ফুটেজ আসে। ২ দিনের মধ্যে পুলিশ ইকবালকে শনাক্ত করে।
পরে, সিসিটিভি ফুটেজ আরও যাচাই-বাছাই ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর বুধবার রাতে এটি প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনাক্তের পর গত শনিবারই ইকবালের ভাই ও মামাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় বলে ইকবালের মা আমেনা বেগম ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ওই ফুটেজগুলো দারোগা বাড়ি মাজারের পাশের একটি বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার।
আজ বৃহস্পতিবার দারোগা বাড়ি মাজারের মসজিদের ইমাম মাওলানা ইয়াসিন নূরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফুটেজে দেখা যাওয়া পুকুরটি মাজারের। আমাদের প্রতিবেশী সাইদুর রহমান সোহাগ (৫০) মাজারের পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন মাছ চাষের জন্য।'
সোহাগ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ইজারাদার তার বাসা থেকে পুকুর নজরদারি করার জন্যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। রাতে কেউ যেন মাছ চুরি বা ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য ক্যামেরা দিয়ে পুকুরে নজর রাখা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই সিসিটিভি ক্যামেরাটি অত্যাধুনিক মুভেবল ক্যামেরা। এটি মোশন ডিটেক্ট করতে পারে।'
এসপি বলেন, 'এই সিসিটিভি ক্যামেরা ৪ সেকেন্ড পরপর মুভ করে।'
'ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সিসিটিভির ১২টি ফুটেজ নিশ্চিত করে সংবাদ ব্রিফিং করেছেন,' বলেন এসপি।
সিসিটিভি ফুটেজের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, 'যে লোকটি করেছেন (মণ্ডপে কোরআন রেখেছেন) ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দেখা গেছে একটা মাজারের সঙ্গে মসজিদে তিনি রাত ৩টার দিকে ৩ বার গিয়েছেন। সেখানে অবস্থান করেছেন। আরও ২ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ বিশ্লেষণ করে সুনিশ্চিত হয়েছেন, ওই ব্যক্তি মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ এনে রেখেছেন। এটা তারই কাজ।'
'তাকে ধরতে পারলে বাকি সব কিছু আমরা উদ্ধার করতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি,' বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Comments