যশোর শিক্ষাবোর্ডে আরও আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতি, দুদকে অভিযোগ
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের ১৬টি চেক জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা উওোলন করে আত্মসাৎ করার নতুন ঘটনা ধরা পড়েছে। বিষয়টি দুদককে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র।
২ দফা অডিট তদন্তে এখন পর্যন্ত যশোর শিক্ষাবোর্ডের ব্যাংক থেকে ২৬টি চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য ধরা পড়েছে।
চেক জালিয়াতি করে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লোপাটের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ অডিটে এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে দুদককে অবহিত করেছে।
নতুন জালিয়াতির ১৬টি চেকের সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম ১১টি চেক জালিয়াতির সময় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর আব্দুল আলীম এবং সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রফেসর তবিবার রহমান ও ড. মোল্লা আমীর হোসেন। অর্থাৎ শুধু বর্তমান চেয়ারম্যান বা সচিব নয়, জালিয়াত চক্রটি গত ৫ বছর ধরে এই চেক জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত।
প্রথমে ৯টি চেকের মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা এবং পরে আরও ১টি চেকের মাধ্যমে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১৬ লাখ টাকা বোর্ডের ব্যাংক একাউন্ট থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। যা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত যশোর শিক্ষাবোর্ডের ব্যাংক থেকে ২৬টি চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য ধরা পড়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে এভাবে কোটি কোটি টাকা জালিয়াতি করে বোর্ডের ব্যাংক একাউন্ট খালি করে দিচ্ছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, '১৬টি চেক জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার দুদককে জানানো হয়েছে।'
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, নতুন করে ধরা পড়া জালিয়াতির এই টাকা বোর্ডের ২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৯টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা পড়েছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বোর্ডের সেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদের নামে ৯৪ হাজার ৩১৬ টাকার একটি চেক ইস্যু করা হয়। কিন্তু সেই চেকের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয় ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ওই বছর ৭ অক্টোবর আবুল কালাম আজাদের ব্যাংক একাউন্টেই সেই টাকা জমা হয়। আর বর্তমানে হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম নিয়েছেন ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা। ২০২০ সালের ১ মার্চ ৬ হাজার ১৯৫ টাকার ইস্যু করা চেক জালিয়াতি করে তিনি ৪ মার্চ এই টাকা তুলে নেন।
৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪টি চেক জালিয়াতি করেছে যশোর শহরের জামে মসজিদ লেনের নূর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক একাউন্টে ৪টি চেকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৪৬৮ টাকা গেছে। এ ছাড়া, বিজনেস আইটি ১২ হাজার ২৭৬ টাকার চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকা, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেস ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকার চেক দিয়ে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩০ টাকা, নিহার প্রিন্টিং প্রেস ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকার চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩০ টাকা, সামিয়া ইলেকট্রনিক্স ৫৫ হাজার ৭৬২ টাকার চেকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ৯০ টাকা, মিম প্রিন্টিং প্রেস ২০ হাজার ২৪০ টাকার চেকের মাধ্যমে ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা, শাহীলাল স্টোর ১১ হাজার ১৯৯ টাকার চেকের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা, শরীফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকার চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫০ টাকা এবং অর্পানেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২টি চেকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৬ টাকা।
সূত্র বলছে, ধরা পড়া জালিয়াতির মধ্যে অর্থ আত্মসাতের প্রথমটি ঘটে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৬টি চেক জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে একাধিক চেয়ারম্যান ও সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে এসব চেকে একাধিক চেয়ারম্যান ও সচিব স্বাক্ষর করেছেন।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক বলেন, 'আমরা আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে গত ২১ অক্টোবর দুদকে আরও একটি অভিযোগ দিয়েছি। ওই সময় মোল্লা আমীর হোসেন (বর্তমানে চেয়ারম্যান) বোর্ডের সচিব থাকাবস্থায় প্রথম এই জালিয়াতি করা হয়েছে। বোর্ডের আবদুস সালাম তখন হিসাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন।'
দুদক যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, 'আমাদের কাছে আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করা হবে।'
গত ১৮ অক্টোবর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
Comments