
আজকাল প্রায়ই মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশ, রকেটে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ধরনের একটি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাঠমিস্ত্রী ও আরেকজন ছিলেন স্যানিটারি মিস্ত্রী। সেই পেশা ছেড়ে প্রায় ৩ বছর আগে যুক্ত হন মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের সঙ্গে, হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।
তারা হলেন-মো. নুরুজ্জামান মাতুব্বর (৩৫), মো. সজিব মাতুব্বর (২১) ও মো. সুমন শিকদার (৪৫)।
আজ বুধবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন যে প্রতারক চক্র ৩ ধাপে এই প্রতারণা কার্যক্রম চালায়।
এ চক্রের ১ম গ্রুপের সদস্যরা মোবাইল ব্যাংকিং হেড অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে স্থানীয় প্রতিনিধির (এসআর) নম্বর সংগ্রহ করে। পরে সেই নম্বরে যোগাযোগ করে তাকে লোভ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্ররোচিত করে। এসআর তাদের দলে চলে এলেই প্রতারণার প্রথম ধাপ শুরু। সাধারণত সহজ-সরল মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট বা এজেন্টের সহকারি তাদের মূল টার্গেট।
দ্বিতীয় ধাপে এসআরের কাছ থেকে এজেন্টের তথ্য পেয়ে এসআরের নম্বর স্পুফিং বা ক্লোনিং করে এজেন্টের নম্বরে কল করে উন্নত সেবার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ করার অনুরোধ করা হয়। বলা হয় যে কল সেন্টার থেকে তাকে কল দেওয়া হবে। প্রতারক গ্রুপের অপর সদস্য কল সেন্টারের নম্বর স্পুফিং বা ক্লোনিং করে এজেন্টকে ফোন দিয়ে উন্নত সেবা পেতে সার্ভিস পরিবর্তনের জন্য অফার জানায় এবং বিভিন্ন সেবা পেতে মোবাইল ফোনের কি বোর্ড বা বাটনে বিভিন্ন অক্ষর বা সংখ্যা চাপতে বলে। সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে বিভিন্ন তথ্য দিতে বলা হয়।
এভাবে এক পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের নামে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তা ডায়াল বা মেসেজ অপশনে গিয়ে 'ওকে' বাটন চাপতে বলা হয় এবং এভাবে এজেন্টের কাছ থেকে তার বিকাশ, রকেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পিন নম্বর নিয়ে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এরপর এজেন্টের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের অন্যান্য সহযোগীদের কাছে ট্রান্সফার করে দেয়। তারা বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ওই টাকা তুলে নেয়।
প্রতারক চক্রের এই ৩ সদস্যকে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৪।
তাদের মধ্যে নুরুজ্জামান মাতুব্বর ২০০০ সালে ঢাকায় স্যানিটারি মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০১৫ সালে তিনি ঢাকা থেকে নিজ এলাকা ফরিদপুরে ফিরে যান এবং কৃষিকাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি ডিজিটাল প্রতারণা শুরু করেন। ২০২১ সালে প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হন। ৩ মাস আগে তিনি জামিনে বের হয়ে আবার এ প্রতারণায় যোগ দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত সজিব মাতুব্বর কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে তিনি ডিজিটাল প্রতারণায় যুক্ত হন। ২০২১ সালে প্রথমে মাদক মামলায় র্যাব ও পরে ডিজিটাল প্রতারণা মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২ মাস আগে তিনি জামিনে বের হয়ে আবার এ প্রতারণার কাজে যুক্ত হন।
সুমন শিকদার ২০০১ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে মোবাইলের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশে এসআর হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালে এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের তারা জানান যে টাকা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে প্রতি ১ লাখ টাকায় এসআর পায় ২০-২৫ হাজার টাকা, যে এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয় সে পায় ১০-১২ হাজার টাকা এবং বাকি ৬৫-৭০ হাজার টাকা প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
র্যাব জানায়, মঙ্গলবার ও বুধবার ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি মোবাইল সেট ও বিভিন্ন কোম্পানির ২৪টি সিম কার্ড জব্দ করে।
তারা তাদের অন্যান্য পলাতক সহযোগীদের সঙ্গে যোগসাজশে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের বেশি লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে আনুমানিক ১ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
Comments