প্রাইভেট কার পুকুরে পড়ে ২ এসআই নিহত হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্ন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে গতকাল সোমবার ইয়াবাসহ জব্দ করা প্রাইভেট কার পুকুরে পড়ে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) নিহত হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও কোনো মামলা হয়নি। পলাতক আসামিকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পুলিশ বলেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আলমগীর হোসেন নামের একজন ৪২ হাজার ইয়াবা নিয়ে আসছিলেন। সোমবার সকালে সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা ব্রিজ এলাকায় গাড়ি থামিয়ে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে আসামি ও গাড়ি নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিংয়ের পর ওই গাড়িতে চড়েই আসামিকে সোনারগাঁও থানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশের তিন জন। চালকের আসনে ছিলেন এসআই শরীফুল ইসলাম। পেছনের আসনে আসামিসহ ছিলেন দুই পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁও থানায় যাওয়ার পথে নীল রঙয়ের গাড়িটি দ্রুত গতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। পুলিশ বলছে, অন্য একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কেন আসামির গাড়িতে চড়ল? আসামিকে কেন পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো না? নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এই প্রশ্নের জবাবে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা তাদের ভুল ছিল। জব্দ করা গাড়ি প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য আনা হয়েছিল। এসআই শরীফ গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় তিনিও মারা গেছেন।'
নসিমন চালক মোক্তার হোসেন এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। গাড়িটি পুকুরে পড়ে যাওয়ার পর তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। তিনি ডুবে যাওয়া গাড়িটি থেকে মোট তিন জনকে উদ্ধারের কথা জানান, যারা সবাই পুলিশ সদস্য।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে গাড়িটি দ্রুতগতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই আমি একজনকে কাঁদতে দেখি। পরে পুকুর থেকে তিন পুলিশকে উদ্ধার করে আমার নসিমন গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। যাকে কাঁদতে দেখেছিলাম তাকে আর সেখানে দেখিনি।'
তবে গাড়িটি কে চালাচ্ছিল নসিমন চালক মোক্তার তা বলতে পারেননি।
এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এএসআইয়ের বরাত দিয়ে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, 'এসআই শরীফুল চালকের আসনে ছিলেন। তার পাশের সিট খালি ছিল। পিছনে দুই পাশে পুলিশ আর মাঝখানে আসামি ছিলেন। স্থানীয়রা এএসআই ও আসামিকে আগে উদ্ধার করেন। পরে অন্য দুই এসআইকে উদ্ধার করে। দেরিতে উদ্ধার হওয়ায় তারা মারা যায়। এ সময় আসামি হাতকড়াসহ পালিয়ে যান।'
তিনি আরও বলেন, 'উদ্ধার হওয়া এএসআই রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি সুস্থ হলে আমরা আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।'
পুলিশ নয়, চালকের আসনে ছিলেন আসামি, এমন অভিযোগের ব্যাপারে এসপি বলেন, 'অনেক গণমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি, কিন্তু তারা কোথায় সেই সূত্র পেয়েছে আমার জানা নেই।'
প্রাইভেটকার পুকুরে পড়ে নিহতরা হলেন, এসআই কাজী সালেহ আহম্মেদ ও এসআই এসএম শরীফুল ইসলাম। তাদের দুজনের বাড়ি যথাক্রমে ফরিদপুরের মুনসুরাবাদ গ্রামে ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. এসকে ফরহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা পানিতে ডুবে মারা গেছেন। শুনেছি তাদের গাড়ি পানিতে পড়ে গিয়েছিল। গাড়ি থেকে বের হতে না পেরে তারা ডুবে মারা যান।'
Comments