অকেজো কিডনি নিয়েও বাঁচতে চান রাবি শিক্ষার্থী পার্থ
'আমি বাঁচতে চাই, পড়ালেখা করতে চাই' এমন আকুতি নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পার্থ সারথি রায়। চোখ-মুখ জুড়ে শুধুই বেঁচে থাকার অনুনয়। খুব বেশি কথা বলতে পারেন না। কেউ দেখতে গেলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। এখনও স্বপ্ন দেখেন পড়াশুনা করে জীবনে কিছু একটা করবেন। কিন্তু জানেন না তার জীবন প্রদীপ কতটা সঙ্কটে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট এলাকার মেধাবী এই শিক্ষার্থীর দিনরাত কাটছে বিছানায় শুয়ে। তার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া তার জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ২০ লাখ টাকা যোগাড় করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই বিছানায় শুয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন পার্থ।
সংসারে আছেন বিধবা মা বিদদু বালা রায় ও বড় দাদা শৈলেন্দ্র নাথ রায়। সংসার চলে সামান্য কিছু আবাদি জমির ফসল দিয়ে। তার বাবা ভবেশ চন্দ্র রায় ২০১৩ সালে মারা যান। তিনি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন মাঠকর্মী।
বাবার মৃত্যুর পর ২০১৪ সালে নবম শ্রেণিতে পড়াকালে কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত হন পার্থ সারথি রায়। চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। দুই বছর তার পড়াশুনা বন্ধ ছিল। ভারতে চিকিৎসার পর সুস্থ হলে তিনি পুনরায় পড়াশুনা শুরু করেন। ২০১৭ সালে এসএসসি ও ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৫টিতেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন ক্লাস করার পর করোনা মহামারির কারণে বাড়িতে চলে আসেন। আবারও আক্রান্ত হন কিডনির সমস্যায়।
পার্থ সারথির দাদা শৈলেন্দ্র নাথ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালেই চোখে জল আসে। ভাইটা শুধু বলে, দাদা আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচাও। ভাইকে শুধু সান্ত্বনা দেই চিন্তা করিস না, তুই বাঁচবি, তোকে বাঁচতে হবে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।'
'চিকিৎসার জন্য তাকে ১৩ বার ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। রংপুর আর ঢাকায় নিয়ে গিয়েছি অসংখ্যবার। এক সপ্তাহ আগে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এজন্য লাগবে ২০ লাখ টাকার বেশি', বলেন তিনি।
শৈলেন্দ্র নাথ রায় আরও বলেন, 'পার্থের দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় বাবার পেনশনের ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। দুই বিঘা আবাদি জমি বিক্রি করেছি। কিছু জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছে সহযোগিতা নিয়েছি। তার চিকিৎসার জন্য আমাদের কাছে আর কোনো অপশন নেই।'
পার্থ সারথির মা বিদদু বালা রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ছেলেকে একটি কিডনি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রতিস্থাপনের খরচ তাদের কাছে নেই।
'আমি শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি। পার্থ সবসময় বাঁচার আকুতি জানায়। আমি মা হয়ে তার এই আকুতি সহ্য করতে পারি না', বলেন তিনি।
বিদদু বালা রায় আরও বলেন, 'সমাজের বিত্তবান, হৃদয়বান মানুষ আর সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমার পার্থ জীবন ফিরে পাবে। আবার সে পড়াশুনা করবে এবং স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।'
Comments