ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেভাবে শুরু হয় বসন্ত উৎসব

কোন রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থীর উদযাপন করা বসন্তের প্রথম দিন, পহেলা ফাল্গুন আজ দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

কোন রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থীর উদযাপন করা বসন্তের প্রথম দিন, পহেলা ফাল্গুন আজ দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

শুরুর এত বছর পর যখন এই উৎসব দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে তখন এর উদ্যোক্তারা আবার একত্রিত হয়ে শুনিয়েছেন সেইসব দিনের স্মৃতির কথা।

সে সময়ে যারা চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন তাদের একজন ভাস্কর মুক্তি ভৌমিক। তিনি জানান, পহেলা ফাল্গুনের আগের দিন অনুষদের কিছু মেয়ে শাড়ি কিনে মৈত্রী হলে রাতের বেলা শাড়িগুলোতে ব্লক প্রিন্ট করেন। পরের দিন তারা ওই শাড়ি পরে ফ্যাকাল্টিতে আসেন। পাশেই চলা একুশে বইমেলা এতে যোগ করে উৎসবের ছোঁয়া।

এর কিছু দিন আগেই স্বৈরাচার সামরিক শাসক এরশাদের পতন হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের বিজয় উদযাপন করতে রঙিন কাগজ দিয়ে ফুল, প্রজাপতি ও পাখি বানিয়ে রাখা হয়েছিল। ৮৯তম ব্যাচের ছেলেরাও এসব নিয়ে মেয়েদের সঙ্গে শোভাযাত্রায় যোগ দেন।

এই শোভাযাত্রায় ছিলেন ডিজাইন হাউজ পপ আর্টের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান টুটুল। তিনি জানান, শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করার সময় তারা সবাই ছোটবেলায় মুখস্থ করা ছড়া আবৃত্তি করছিলেন।

তার আগে বাংলাদেশে বসন্ত বরণ শুধুমাত্র হলুদ বা কমলা রঙের পোশাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলা পঞ্জিকায় বসন্তের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে উৎসব পালন করা হচ্ছে বলে জানান চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো রবিউল ইসলাম।

পরের বছর ১৯৯২ সালে, চারুকলার শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে একে অপরের মুখে আবির মাখিয়ে ও ছোট একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে বসন্ত উৎসব করেন। আর ১৯৯৩ সালে পহেলা ফাল্গুনে ক্যাম্পাসে হোলি উৎসব আয়োজন করা হয়।

এর কয়েক বছর পর, চারুকলাসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আর সব উৎসবের মতই এই দিনটিকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করেন।

চারুকলার শিক্ষার্থীদের বসন্ত উৎসব আয়োজনের আরেকটি কারণ ছিলো মানুষ যেন গ্রামীণ বাঙালি সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়। “আমরা যারা শহুরে কৃত্রিমতার মধ্যে থাকি তারা প্রায়ই বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশগুলো থেকে দূরে থাকি। এগুলো [পহেলা বৈশাখ ও বসন্ত বরণ] আমাদের শেকড়ের সাথে আটকে রাখে,” বলেন রবিউল।

শুধু আনন্দ করার জন্যই ১৯৯১ সালে সেদিনের বসন্ত শোভাযাত্রায় যুক্ত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই স্মৃতি আজও তাদের আন্দোলিত করে।

টুটুল স্মরণ করেন, তিন জন বাদেও সেদিন উপস্থিতি ছিলেন, জুবায়ের মাহবুব তুষার, সাজু ফায়জুল, কল্লোল বড়ুয়া, মাহবুবুর রশিদ, তৌফিক খান, আশরাফুল কবির কনক, জায়েদ আহমেদ লিটন, সুমিতা খান, বুলা হালদার, মনিদ্বীপা দাসগুপ্ত, রিফাত জাহান কান্তা, কানিজ সোহানি ইসলাম, রেবেকা সুলতানা মলি ও আব্দুস সালাম।

কয়েক বছর আগে ভাস্কর মুক্তি, ঝিনাইদহে অল্পবয়সী কিছু ছেলেমেয়েকে ফুল ও রঙিন পোশাকে পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করতে দেখেছেন। এই ছেলেমেয়েদের দেখে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন তিনি।

“পহেলা ফাল্গুন, বৈশাখ, পৌষ উৎসব—এগুলো আমাদের গর্ব,” বলেন লেখক ও সেকুলার একটিভিস্ট কামাল পাশা চৌধুরী। তার মতে আরও বেশি মানুষের মধ্যে এই এটা পৌঁছে দিতে ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব হিসেবে স্পনসর এমনকি সরকারেরও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

ছবিগুলো তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ

Click here to read the English version of this news

Comments