এ দেশের গণসংগীতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো: ফেরদৌস ওয়াহিদ

ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই ও আজম খান ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফিরোজ সাঁই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই। আজম খানও নেই বেশ কয়েক বছর হলো। এবার ফেরদৌস ওয়াহিদ হারালেন তার বন্ধু ফকির আলমগীরকে।
এক মঞ্চে (বা থেকে) ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীর, আজম খান এবং ফিরোজ সাঁই। ছবি: সংগৃহীত

ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই ও আজম খান ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফিরোজ সাঁই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই। আজম খানও নেই বেশ কয়েক বছর হলো। এবার ফেরদৌস ওয়াহিদ হারালেন তার বন্ধু ফকির আলমগীরকে।

গতকাল শুক্রবার প্রয়াত হন গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বন্ধুর স্মৃতিচারণ করেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।

ফকির আলমগীর্ ছবি: স্টার ফাইল ফটো

'ফকির আলমগীরের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭৩ সালে। সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্ব ছিল চিরকাল। আমাদের মধ্যে কখনও অভিমান হয়নি। আমাদের বন্ধুত্ব ছিল মান-অভিমানের অনেক ঊর্ধ্বে।

এতো বছরের পথচলা, কত শত স্মৃতি আমাদের। দেশে-বিদেশে গান করার স্মৃতি, আড্ডার স্মৃতি, বেড়ানোর স্মৃতি। জীবনের মধুর সময়ের অসম্ভব সুখের হাজারও স্মৃতি আমাদের।

ফকির আলমগীর গণসংগীতকে অনেকদূর নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুতে দেশের গণসংগীতের শূন্যতা শুরু হলো। জানি না কবে এই শূন্যতা পূরণ হবে। গণসংগীতের ভাণ্ডার ছিল ফকির আলমগীর। তার কতটা অর্জন, তা দেশের মানুষ এখন বুঝবে।

বাংলাদেশের গণসংগীতকে ফকির আলমগীর একাই সারা বিশ্বের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার সাধনা ছিল অসাধারণ। একই সঙ্গে গণসংগীত ও পপ ঘরানার গান করেছে সে।

ফেরদৌস ওয়াহিদ। ছবি: সংগৃহীত

কাল রাতে খবরটি শোনার পর থেকে সত্যি খারাপ লাগছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। কেবলই মনে হচ্ছিল—ফকির আলমগীরের কণ্ঠে আর কোনোদিন শুনব না। শুনব না নেলসন ম্যান্ডেলার সেই বিখ্যাত গান। শুনব না মে দিবস এলে তার কালজয়ী গানগুলো। আর কখনো তার সঙ্গে আমার দেখা হবে না, গল্প করা হবে না। আমাকে ফোন করে বলবে না, বন্ধু কেমন আছিস?

ফকির আলমগীর মেহনতি মানুষের জন্য গান করতো, শ্রমজীবী মানুষের জন্য গান করতো। গান দিয়ে সে জয় করে নিয়েছিল কোটি মানুষের মন।

ফকির আলমগীর ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীকে একাই ধরে রেখেছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। লেখালেখিও করছে। একজন মানুষ অনেকগুলো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর জন্য যোগ্যতা লাগে। তার সেটা ছিল।

ফকির আলমগীরের ছিল সবাইকে আপন করে নেওয়ার বিরাট ক্ষমতা। তার ভেতরটা বড় ছিল বলেই সব মানুষকে আপন করে নিতে পারতো।

যে কাউকে অনায়াসে ভাইডি বলে সম্বোধন করতো। দেখা হলেই জড়িয়ে ধরে কাছের মানুষদের বলতো—ভাইডি কেমন আছেন?

আমি, ফকির আলমগীর, ফিরোজ সাঁই, আজম খান একসঙ্গে বহু জায়গায় গান করেছি। তিন জনই আর নেই, আমি একা হয়ে গেলাম।

একটা সময় ছিল যখন কখনও ফকির আলমগীরের বাসায়, কখনও আজম খানের বাসায়, কখনও ফিরোজ সাঁইয়ের বাসায়, আবার কখনও আমার বাসায় আড্ডা হতো।

ফকির আলমগীর তার যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাকে নিমন্ত্রণ করতো। শিশুর মতো মন ছিল ফকির আলমগীরের। একদিনের ঘটনা বলি। ফকির আলমগীরের বিয়ের দিনের ঘটনা। ফকির আলমগীরের মাথার পাগড়িটা আমিই পড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেই ছবি এখনও আছে।

ফকির আলমগীর অনেক পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছিল। নিজের অবস্থান সব সময় ধরে রাখা যায় না। কিন্তু সে তার অবস্থান ধরে রেখেছিল সারা জীবন।

ফকির আলমগীর নেই, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমার তিন বন্ধুই চলে গেল আমাকে ছেড়ে।

ফকির, প্রিয় বন্ধু, যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস।'

Comments

The Daily Star  | English

Anontex Loans: Janata in deep trouble as BB digs up scams

Bangladesh Bank has ordered Janata Bank to cancel the Tk 3,359 crore interest waiver facility the lender had allowed to AnonTex Group, after an audit found forgeries and scams involving the loans.

4h ago