এই ভালোবাসা ও সম্মান অর্থ দিয়ে কেনা যাবে না: রুনা লায়লা
সংগীত জীবনের ৫৫ বছর পার করেছেন উপমহাদেশের বরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লা। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ৩ দেশ মিলিয়ে ১০ হাজার গান করেছেন। বাংলাদেশকে গানের মধ্যে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার গাওয়া বহু গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
একজন পরিপূর্ণ শিল্পীর জীবন্ত উদাহরণ তিনি। সুরের জাদুকরি স্পর্শ দিয়ে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে নেওয়া রুনা লায়লা সম্প্রতি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: ভারতীয় উপমহাদেশের একজন নন্দিত শিল্পী আপনি। শিল্পী জীবনকে কীভাবে দেখেন?
রুনা লায়লা: সুন্দরভাবে এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি। এছাড়া আমার পরিবার, মা-বাবাসহ অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ এতদূর আসার জন্য। তবে, মায়ের অবদান অনেক। উপরওয়ালার রহমত অবশ্যই আছে। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের ভালোাবাসা নিয়ে এখনো পথ চলছি। অনেক পেয়েছি। জীবনের স্বার্থকতা এটাই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে এটাও বড় খুশির কথা, আনন্দের কথা। এই ভালোবাসা ও সম্মান অর্থ দিয়ে কেনা যাবে না। কোনকিছুর বিনিময়েও এইরকম ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া সম্ভব নয়। শিল্পী জীবনের এটাই তৃপ্তির কথা।
দ্য ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের বাইরে ভারতে ও পাকিস্তানের সিনেমায় গান করেছেন। পৃথিবীর বহুদেশে স্টেজ শো করেছেন। দেশের বাইরে যাওয়ার পর প্রথম কোন কথাটি মনে হয়?
রুনা লায়লা: প্রথমেই মনে হয়, সবার আগে আমার দেশ। আমার বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রাধান্য আগে। যেখানেই যাই, আমার বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি। বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরি। সব সময় বলি রুনা লায়লা বাংলাদেশের। রুনা লায়লা ফ্রম বাংলাদেশ। যে দেশেই যাই না কেন, মানুষ সম্মান করেন।
দ্য ডেইলি স্টার: নিজ দেশ ছাড়াও দুনিয়াজুড়ে আপনার নাম ছড়িয়ে আছে। এত কিছু পেয়েছেন একজীবনে, তারপরও আফসোস কাজ করে কী?
রুনা লায়লা: না। আমি কর্ম বিশ্বাসী। কর্মটাই টিকে থাকবে। সব সময় কাজ নিয়ে থাকতে চাই। গান নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। গানটাই করতে চাই। গানই সব। গানের মধ্যে থাকতে চাই। গানই বাঁচিয়ে রাখবে। আফসোস নেই।
দ্য ডেইলি স্টার: নতুন গায়ক গায়িকাদের নিয়ে মন্তব্য?
রুনা লায়লা: নতুনরা ভালো করছে। আরও সঠিক গাইডলাইন দরকার নতুনদের জন্য। অনেককিছু দরকার ওদের। সব সময় নতুনদের উৎসাহ দিই আমি। নতুনরা টেলিভিশনে যখন গান করে, মাঝে মাঝে তাদের অনুষ্ঠান চলাকালীন ফোনও করি। এতে করে ওরা খুশি হয়, অনুপ্রেরণা পায়। নতুনদের জন্য অনুপ্রেরণা দরকার, তাহলেই ওরা অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে। ভালোও করতে পারবে।
নতুনদের প্রতি আমার একটাই কথা, তোমরা অন্যদের বিখ্যাত গান করো কিন্ত তোমাদেরকে মৌলিক গানও করতে হবে। নিজেদের গান থাকতে হবে। নিজস্বতা তৈরি করতে হবে। নিজের গান দিয়ে পরিচিতি পেতে হবে। আমার কথা বলতে পারি, আমি যা
শিখেছি নতুনদের দেওয়ার চেষ্টা করছি। নতুনদের মধ্যে অনেক মেধাবী আছে।
দ্য ডেইলি স্টার: একজন শিল্পীর সমাজের প্রতি দায় কতটা আছে?
রুনা লায়লা: অবশ্যই দায় আছে। আমি সব সময় চেষ্টা করি সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে। কেন না, এই সমাজ ও দেশ আমাদের। নিজের সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাটা তো প্রথমে দেশ থেকেই পাচ্ছি। তারপর বিদেশ থেকে। একজন শিল্পীর
একটি কথা অনেকে অনুসরণ করেন। তাই শিল্পীকে অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
আমি সব সময় এটা করি। ভ্যাকসিন যখন প্রথম এলো, আমি নিয়েছি। সেই ছবি ফেসবুকে দিয়ে অন্যদের দিতে বলেছি। এতে করে অন্যরা উৎসাহিত হবেন। এটা শিল্পীর কাজ। আমরা যদি ভালো কাজ করি, ভালো কাজকে সমর্থন করি তাহলে সবকিছু আরও ভালো হবে। আমার কথা হচ্ছে, যদি একজনেরও উপকার করতে পারি তাও কম কী। আমার একটি কথা যদি এক হাজার জন শুনে থাকে সেটাও একটা বিষয়। মূল কথা হচ্ছে নিজের দায় থেকে কাজ করি। দেশপ্রেম থেকে এটা করি।
দ্য ডেইলি স্টার: সংগীতকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রুনা লায়লা: সাধনা। শিল্পীর জন্য সাধনা বড় দরকার। সাধনা, চেষ্টা, সততা, শ্রম সবই থাকতে হয়। তার মধ্যে সাধনটা বেশি প্রয়োজন। গানকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।
Comments