নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী ও প্রচারমাধ্যমের দায়

সম্প্রতি প্রচারিত কয়েকটি টিভি নাটক নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে। ‘ঘটনা সত্য’ নামে একটি নাটক প্রচারের পর অটিজম নিয়ে সমাজে ভুল বার্তা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয়শিল্পী সংঘ, টেলিপ্যাব, চিত্রনাট্যকারসহ ছোট পর্দার ১৫টি সংগঠনের মোর্চা ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। এফটিপিও সিদ্ধান্ত নেয়, আপত্তির পর ‘ঘটনা সত্য’ নাটকটি কোনোভাবেই আর পরিবর্তন–পরিবর্ধন করে ইউটিউব বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার করা যাবে না।
(ওপরে বাম দিক থেকে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী) রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মোর্শেদুল ইসলাম, আশফাক নিপুণ, অপি করিম ও অমিতাভ রেজা

সম্প্রতি প্রচারিত কয়েকটি টিভি নাটক নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে। 'ঘটনা সত্য' নামে একটি নাটক প্রচারের পর অটিজম নিয়ে সমাজে ভুল বার্তা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয়শিল্পী সংঘ, টেলিপ্যাব, চিত্রনাট্যকারসহ ছোট পর্দার ১৫টি সংগঠনের মোর্চা ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। এফটিপিও সিদ্ধান্ত নেয়, আপত্তির পর 'ঘটনা সত্য' নাটকটি কোনোভাবেই আর পরিবর্তন–পরিবর্ধন করে ইউটিউব বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার করা যাবে না।

এছাড়া কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ২৫ জুলাই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয় নাটক 'দ্য টিচার'। একই দিন সেটি ইউটিউবেও প্রকাশ হয়। এরপর দর্শকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে নাটকটিতে 'এগ্রিকালচার' শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ। সমালোচনার মুখে ইউটিউব থেকে নাটকের ওই অংশটি কেটে বাদ দেন নির্মাতা।

ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে অভিনয় শিল্পীদের দিক থেকে অভিযোগ আছে, অনেক নির্মাতা চিত্রনাট্য ছাড়াই এখন কাজ করেন। আবার নির্মাতাদের অভিযোগ প্রচার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো প্রিভিউ ছাড়া অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে এসব ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়াতে নির্মাতা-অভিনয় শিল্পীদের দায়বদ্ধতার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে অভিনয় শিল্পী রামেন্দু মজুমদার, অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা, অভিনয় শিল্পী অপি করিম ও নির্মাতা আশফাক নিপুণের সঙ্গে।

রামেন্দু মজুমদার

'শিল্পীদের অবশ্যই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের কাজটা যেহেতু সমাজে একটা প্রভাব তৈরি করে। সুতরাং তাদের খুবই দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন। আমরা যারা নাটক নির্মাণ করি বা কোনো অনুষ্ঠান তৈরি করি, অবশ্যই সব কিছুর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনো কাজ কারও মূল্যবোধকে আঘাত করছে কি না, কাউকে অসম্মান করছে কি না, কারও অনুভূতিকে আঘাত করছে কি না।'

'সম্প্রতি 'ঘটনা সত্য' নামে একটি নাটকে দায়িত্বহীন আচরণ করা হয়েছে। এই নাটকের শেষে ধারাবর্ণনায় খুবই আপত্তিকর জিনিস প্রচার করা হয়েছে। এটাকে গর্হিত অপরাধ বলে আমি মনে করি এবং যে এই কাজটা করেছে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। খালি দুঃখপ্রকাশই যথেষ্ট নয়।'

'এর পাশাপাশি আমাদের দেশে একটি স্ট্যান্ডার্ড ব্রডকাস্টিং অথরিটি তৈরি করা উচিত। যাতে করে কোনো কনটেন্ট সম্পর্কে যদি কোনো আপত্তি থাকে তাদের কাছে অভিযোগ করা যাবে। যারা একদিকে যেমন চোখ রাখবে কোথায় কি প্রচারিত হচ্ছে। অন্যদিকে, কোনো অভিযোগ আসলে সেটার সুরাহা করবে। এছাড়া সব টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই একটা শক্তিশালী প্রিভিউ কমিটি গঠন করতে হবে। তারা যে অনুষ্ঠানগুলো প্রচার করছে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য, আপত্তিকর কি না সেগুলো তদারকি করবে। এসব বিষয়ে তাদের অবশ্যই আরও যত্নবান হতে হবে।'

'নির্মাতা-অভিনয় শিল্পীদের দায়বদ্ধতার জায়গা হলো, জেনে-শুনে এই ধরনের কাজ না করা। অনেক সময় শিল্পীরা না বুঝে এ ধরনের ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় চিত্রনাট্য পড়ার পরও তারা বুঝে উঠতে পারে না। আমি মনে করি, শিল্পীদের অবশ্যই চিত্রনাট্য সম্পর্কে পুরো জ্ঞান নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। আমি যতটুকু জেনেছি 'ঘটনা সত্য' নাটকটি যখন প্রচারিত হয়, তখন শেষের কমেন্ট্রিটা ছিল না। যখন ইউটিউবে আপ করা হয়েছে, তখন সেটা যোগ করা হয়েছে। সুতরাং পুরো দায়ভারটা পড়বে এটার নির্মাতার ওপর।'       

মোর্শেদুল ইসলাম

'যে কোনো মানুষের মতো শিল্পীদেরও অবশ্যই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। তবে, শিল্পীদের দায়বদ্ধতা আরও বেশি। কারণ, শিল্পীরা সমাজের সংবেদনশীল অংশ। একজন শিল্পীকে সমাজ অনুকরণ করে। সুতরাং তাকে খেয়াল রাখতে হবে তার আচরণে, তার কার্যকলাপে কোনোভাবেই যেন সমাজের কাউকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে। তার কাজে যেন দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পায়।'

'সম্প্রতি একটা নাটক নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে আমাদের স্পেশাল চাইল্ড যারা তাদের নিয়ে খুবই খারাপ মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্পেশাল চাইল্ডরা নাকি পাপের ফসল। এটা যদি বলা হয়ে থাকে তাহলে এটাকে আমি বলব ক্ষমাহীন অপরাধ।'

'একটা নাটক তো অনেকগুলো হাত ঘুরে প্রচারিত হয়। একজন রচনা করেন, একজন পরিচালনা করেন। অভিনয় শিল্পীরা অভিনয় করেন। টেলিভিশনে সেটা প্রচার হয়। সবগুলো পর্যায়ে একটা করে চেক হওয়া উচিত। এতগুলো পর্যায়ে ধরা পড়ল না যে, সেটাতে আপত্তিকর সংলাপ রয়েছে।'

'পরিচালকের বাইরে যারা কাজ করেছেন, তাদেরও বিষয়টা আপত্তিকর মনে হওয়া উচিত ছিল। টেলিভিশন চ্যানেলেরও একটা দায়িত্ব আছে। আমি কী দেখাব, কী দেখাব না। যাই হোক, এই ধরনের কাজ তো হচ্ছেই, এর বাইরেও আরও অনেক ধরনের অনিয়ম হচ্ছে।'

'একজন শিল্পী শুধু টাকার জন্য কাজ করতে পারেন না। কোনো নাটকে অভিনয় বা পণ্যের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও তাদের দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট পণ্য বা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিকর কি না। হয়তো তাদের পক্ষে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। কিন্তু মোটাদাগে দেখতে হবে, যেটা প্রচার করছি, সেটা সমাজে ক্ষতিকর কোনো প্রভাব ফেলছে কি না। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।'

মামুনুর রশীদ

'আমরা বহু বছর ধরে কাজ করছি। এক সময় দেখেছি, একটা নাটক করার পর প্রশ্ন উঠত, এটার মেসেজ কী। সমাজের কাছে কী বলতে চাই, এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। যে কারণে আমরা খুব সতর্ক থাকতাম। সমাজের কোনো একটা শ্রেণি, কেউ যাতে কষ্ট না পায়। দেশের সব মানুষ, কোনো পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক লোকটা পর্যন্ত নাটকটা দেখবে।'

'কিন্তু ১৯৯৪ সালে পর এগুলো বেসরকারি খাতে নিয়ে আসা হলো এবং পরবর্তীকালে অনেকগুলো চ্যানেলে শত শত নাটক প্রচারিত হচ্ছে। তখন দেখা গেল সেগুলোর কোনো প্রিভিউ হয় না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সচেতন না। এতে একজন লেখক, পরিচালক অনিচ্ছাকৃত ভুল করতে পারেন আবার ইচ্ছাকৃতভাবেও করতে পারেন। শিল্পীরাও এটা নিয়ে সচেতন না। দেখা যাচ্ছে, তাদের হয়তো আগের থেকে স্ক্রিপ্ট দেওয়া হয় না, রিহার্সাল হয় না। একটা বিরাট লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে। সেই লঙ্কাকাণ্ডের মধ্যে এই দায়িত্বহীনতার জায়গা তৈরি হয়েছে।'

'আমরা আমাদের মিডিয়াতে যা কিছু করব সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনেবুঝে, ভেবে চিন্তে করব। প্রতিটি নাটক একটি বার্তা দেয়। কখনো ভুল বার্তা দেয়, কখনো সঠিক বার্তা দেয়। কখনো দর্শককে অনুপ্রাণিত করে, কখনো বিক্ষুব্ধ করে।'

"ঘটনা সত্য' নাটকে যেটা সত্য নয় সেটা দর্শকের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। প্রতিদিন এতগুলো চ্যানেলে শতশত নাটক প্রচারিত হয়। নাটকগুলো যারা লেখেন, যারা পরিচালনা করেন, যারা অভিনয় করেন তাদের কতটা দায়িত্ববান হওয়া প্রয়োজন সেটা আমরা বহুকাল ধরে বলে আসছি। যারা এগুলো প্রচার করে তাদেরও দায়িত্ববান হওয়া দরকার।'

'এসব ক্ষেত্রে যে দায়িত্বহীনতা রয়েছে। তার কারণ হচ্ছে শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা গোলমাল আছে। কিন্তু যারা মিডিয়াতে কাজ করবেন, তারা তো স্বশিক্ষিত হবেন। তাদের কাছে ন্যায়-অন্যায় ভালো-মন্দ সব কিছুর একটা ব্যাখ্যা থাকতে হবে।' 

অমিতাভ রেজা

'যে নির্মাণ করে তার নির্মাণের প্রকাশের মধ্যে তার সৃজনশীলতা, তার মনন, তার চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হয়। এটা হতে থাকবে। একজনের চিন্তা আরেকজনের ভালো না লাগলে সে তখন তার চিন্তা দিয়ে, সৃজনশীলতা দিয়ে সেটার তীব্র সমালোচনা করবে। পৃথিবীতে এটাই নিয়ম। তবে, অনেক দায়িত্বহীন কাজও হয়। সেটা অনেকের ভালো লাগে না। আবার অনেক কাজ হয়, যেটা প্রাথমিকভাবে ভালো লাগবে না। সামাজিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য না, কিন্তু আগামী পাঁচ বছর পরে সেটা খুবই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে ঢালাও ভাবে কোনো নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব না।'

'প্রতিটা মানুষ তার মতো করে চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করবে। সেটা যদি খারাপ হয়, তাহলে সেই সমাজই তার তীব্র সমালোচনা করবে। এটা সমাজের নিয়ম।'

'আমারা যে তিন ধরনের সাংঘর্ষিক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছি। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম ও আরবি মাধ্যমের মধ্যে সাংঘর্ষিক দার্শনিক সমস্যা তৈরি করে রেখেছি। সমস্যাটা সেখানে। সমস্যাটা শিক্ষার, সমস্যাটা পড়াশোনার। আজকে কোনো ছেলে-মেয়ে ইংরেজিতে দুটো কথা বলতে পারলেই যে তাদের দর্শন বা চিন্তা ভালো হয় না, সেটার প্রমাণ এগুলোতে পাওয়া যায়।'

'মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার। আমরা জানি না, স্পেশাল চাইল্ড বলতে কি বুঝি। ডিরেক্টর, রাইটার, অ্যাক্টরস, ডিস্ট্রিবিউটরস এতগুলো মানুষ বোঝে নাই। তার মানে এটা শিক্ষার সমস্যা।'

'একজন শিল্পী তার নিজস্ব চিন্তা ও সৃজনশীলতার বিকাশ যেভাবে করতে চায়, সেটা প্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে সে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। দায়বদ্ধ না হলে মানুষ সেটা গ্রহণ করবে না, সেটার তীব্র সমালোচনা করবে।'

অপি করিম

'একজন শিল্পীর বা নির্মাতার কাজের সময় কোনো বিষয় পছন্দ না হলে তার বলার অধিকার আছে, আমি এটা করব না বা বলব না। যিনি বলছেন, তিনি হয়তো অনেক অনেক মানুষের প্রিয় একজন। সুতরাং তার মুখ থেকে কোনো কিছু একটা বের হওয়ার যেমন ইতিবাচক দিক আছে, সেটার আবার নেতিবাচক দিকও আছে। সেই যায়গা থেকে আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা শিল্পীর উচিত কোনো মেসেজকে ভুল মনে হলে প্রতিবাদ করা।'

'প্রত্যেক পেশার মানুষের মতো একজন শিল্পীরও অবশ্যই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। তিনি যে সংলাপটা দিচ্ছেন, সেটা বলার আগে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, সেটার মাধ্যমে কোনো ভুল বার্তা যাচ্ছে কি না বা কেউ কষ্ট পেতে পারেন কি না। এছাড়া আমার মনে হয়, শুটিং হাউজে গিয়ে কাজ করার আগে পুরো স্ক্রিপ্ট বা গল্প না পেলে বলা উচিত আমি কাজ করব না। এখানে শিল্পীদের ঐক্য থাকলে পরিচালক বা নির্মাতা স্ক্রিপ্ট দিতে বাধ্য হবে।'   

'আমরা আগের আমলে অনেক বেশি রিহার্সাল করতাম। এখন অনেকে স্ক্রিপ্টও দেয় না। তারা মনে করে শিল্পীরা সংলাপ মুখস্থ করে ফেলেন। তখন অভিনয় হয় না। যারা এভাবে কাজ করেন, আমি তাদের সঙ্গে যখন কাজ করেছি তারা কিন্তু গল্পটা পুরোটা বলে। কী হতে যাচ্ছে না যাচ্ছে। এমন না যে, শুটিংয়ে গিয়ে জানিই না যে আমি কী করতে যাচ্ছি। আমার কাছে মনে হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টা জানার আগে, আমি কী করতে যাচ্ছি সেটা জানা বেশি প্রয়োজন। নানা জন নানাভাবে কাজ করে, সেটা করতেই পারে তবে, স্ক্রিপ্টনির্ভর কাজের বিকল্প নেই।'

'মোটের ওপর সবকিছুর ব্যাপারে আমাদের আগে মানবিক হতে হবে, একটু লেখাপড়া করতে হবে। আমি যে কথাটা বলছি, যে কাজটা করছি সেটা কোনো সম্প্রদায়কে কষ্ট দিচ্ছে কি না, সেই পড়ালেখাটা থাকতে হবে। আমি বলছি না যে অটিজম নিয়ে কাজ করতে হলে অটিজম সম্পর্কে যত অ্যাক্ট আছে সব পড়তে হবে। আমার মূল কথা হলো, মানবিক হতে হবে, আর একটু লেখাপড়া করতে হবে, একটু জানতে হবে।'

'অভিনয়ের পাশাপাশি কোনো কোম্পানি বা পণ্যের প্রচারের ক্ষেত্রেও শিল্পীদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শিল্পীদের দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে থেকে কোনো অভিযোগ আছে কি না। যদি অভিযোগ থাকে তাহলে আমি বলব যে, চিন্তা-ভাবনা করে তাদের সঙ্গে কাজ করা উচিত।'

আশফাক নিপুণ

'সম্প্রতি নাটকের ক্ষেত্রে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা খুবই দুঃখজনক। তবে, সেসব নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এসব সমস্যা সমাধানে আগে গোড়াটা ঠিক করতে হবে। প্রতি ঈদে চার থেকে পাঁচ শ নাটক তৈরি হচ্ছে। এত বেশি নাটকের চাহিদাও আসলে নেই। তারপরও এসব নাটকের নির্মাণ থেকে শুরু করে সম্প্রচার হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে আরও বেশি ভুল হবে, আরও বেশি সমস্যা তৈরি হবে।' 

'পরবর্তীতে এই ধরনের ভুল এড়ানোর জন্য প্রত্যেক চ্যানেলে একটি করে শক্তিশালী প্রিভিউ কমিটি গঠন করা দরকার। প্রিভিউ কমিটি হয়ে নাটকগুলো সম্প্রচারে যাবে।'

'এছাড়া শিল্পীদের দায়বদ্ধতার বিষয়ে যেটা বলতে চাই, শিল্পীরা অন্য দশ জনের থেকে আলাদা। তাই যখন সে কিছু বলবে, সেটা অবশ্যই তার মননশীলতার জায়গা থেকে, যত্ন নিয়ে বলতে হবে। অনেক সময় অসাবধানতার কারণে ভুল বার্তা চলে যেতে পারে।'

"ঘটনা সত্য' নাটকের মাধ্যমে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে সেটা অবৈজ্ঞানিক। পুরোপুরি ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই তার শিক্ষার ভুল। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে কারণে প্রিভিউ কমিটির পর্যবেক্ষণের পর নাটক অন এয়ার হওয়াটা জরুরি। তবে, প্রিভিউ কমিটিকে অবশ্যই সৃজনশীলতা চর্চার স্বাধীনতা রক্ষা করেই কাজ করতে হবে।'

'এর আগে আইনজীবীদের হেয় করার অভিযোগে অভিনেতা মোশাররফ করিমের বিরুদ্ধে এক আইনজীবী মানহানির মামলা করেছেন। সব পেশায় ভালো-মন্দ মানুষ থাকেন। তাই, কোনো বিশেষ চরিত্র নিয়ে কাজ করলে, সেই পেশার মানুষের কাছে থেকে পেশার প্রতি অবমাননা হয়েছে বলে প্রতিবাদ আসলে কাজ করা যায় না। শিল্পীদেরও তো কাজের স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিভিন্ন চরিত্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সংলাপ আসতেই পারে।'

'আবার দর্শক সব সময় সব মেসেজ গ্রহণ করবে তাও ঠিক না। তবে, শিল্পী-নির্মাতাদের জেনে বুঝে কাজ করা উচিত। কোনো নির্মাতা যদি মনে করেন, তিনি জেনে বুঝে কোনো বার্তা দিয়েছেন। তাহলে প্রতিবাদ আসলেও সেই বার্তা প্রত্যাহার না করে সেটার পক্ষে নিজের অবস্থানে অনড় থাকা উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

First phase of India polls: Nearly 50pc voter turnout in first eight hours

An estimated voter turnout of 40 percent was recorded in the first six hours of voting today as India began a six-week polling in Lok Sabha elections covering 102 seats across 21 states and union territories, according to figures compiled from electoral offices in states

1h ago