চাঁদ রাতে যেমন চলছে কেনাকাটা

রাজধানীতে চলছে ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। নিউ মার্কেট ও পান্থপথ এলাকার বিপণিবিতানগুলোর মালিক-কর্মচারীরা বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার চাঁদ রাতকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়নি।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: সুকান্ত হালদার/স্টার

রাজধানীতে চলছে ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। নিউ মার্কেট ও পান্থপথ এলাকার বিপণিবিতানগুলোর মালিক-কর্মচারীরা বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার চাঁদ রাতকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়নি।

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের বড় একটা অংশ এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পেয়েছেন। এ কারণে তারা আগেভাগে কেনাকাটা করে গ্রামে চলে গেছেন। চাঁদ রাতের জন্য অপেক্ষা করেননি। এখন যারা আসছেন ঘোরাঘুরি না করে দ্রুতই পণ্য কিনছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারির কারণে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা করেননি। এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মানুষজন কেনাকাটা করেছেন। নিজেদের পোশাক কেনার পাশাপাশি অতীতের মতো আবারও আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও অনেকে কেনাকাটা করেছেন। তাই বিক্রি বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বিকেলের পর থেকে বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। তবে ইফতারের পরই মূলত ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। রাত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: সুকান্ত হালদার/স্টার

রাজধানীর নূরজাহান সুপার মার্কেটের নিউ কটন ফ্যাশন হাউজের সত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, বিক্রি বেশ ভালো। গত বেশ কিছু দিন ধরে প্রতিদিনই গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। আজ তো চাঁদ রাত, আশা করছি অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বিক্রি বেশি হবে। তবে করোনার আগের ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের তুলনায় আজ ক্রেতা কম।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি, এবারের ঈদে তার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারব।

একই বিপণি বিতানের কানাডা ফ্যাশন হাউজ, খান ফ্যাশন হাউজ, সাত্তার অ্যান্ড সন্স ও বেস্ট কালেকশনের বিক্রয়কর্মীরাও বেচাকেনা নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেন।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সেতু লেডিস এন্ড বেবী ফ্যাশনের প্রোপাইটর সিরাজ উদ্দিন বলেন, চাঁদ রাত হিসেবে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা ততটা বিক্রি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের বেচাকেনা এবার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু ততটা হচ্ছে না।

নিউ মার্কেটে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছিলেন আব্দুর রশিদ। পরিবারের সদস্যদের জন্য মার্কেটে ঘুরে ঘুরে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি কিনেছেন বলে জানালেন। আর জানান, অফিস থেকে ছুটি পেতে দেরি হওয়ায় আজ কেনাকাটা করতে এসেছেন। 

ঢাকার নিউ মার্কেট সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, এ বছর ঈদে বিক্রির বিষয়ে যতটা প্রত্যাশা করেছি তার ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে।

ফ্যাশন ব্যান্ড সেইলরের হেড অব মার্কেটিং মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের তুলনায় এবার ভালো সাড়া পাচ্ছি। যারাই আউটলেটে আসছেন, সবাই কিনছেন। কেউ খালি হাতে ফিরছেন না। আমাদের আউটলেটে আসা ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ২০২০-২১ সালের চাঁদ রাতগুলোয় আমরা দেখেছি একজন ক্রেতা ২/৩টি পণ্য কিনছেন। কিন্তু এবার যারাই আসছেন, কম করে হলেও ৪/৫টি পণ্য কিনছেন। রাত যতই বাড়বে, বিক্রিও ততই বাড়বে। আজ সারারাত আমাদের আউটলেটগুলো খোলা থাকবে।

মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট এলাকায় ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

গ্রামীণ ইউনিক্লোর সাইন্সল্যাব আউটলেটের সেলস অ্যাসোসিয়েট আকবর আজাদ বলেন, বিক্রি ২০১৯ সালের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সংকটের কারণে গত দুই বছর তো মানুষ ওভাবে কেনাকাটা করতে পারেনি। এবার কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এ কারণে ক্রেতারা খুশি মনে শপিং করতে আসতে পারছেন। যেমন বিক্রি হচ্ছে, এতে করে ক্রেতারাও খুশি। আমরাও খুশি।

তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিছু পণ্যের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রিন্টের শার্টসহ কিছু পণ্য।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের রাইজ ফ্যাশন হাউজের সেলস ম্যানেজার আব্দুল হামিদ রাসেল বলেন, এবারের ঈদে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রির আশা করেছিলাম, সেই পরিমাণ হয়নি। আমারা টার্গেটের ৬০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছি।

তিনি বলেন, তবে যতটুকু ব্যবসা হয়েছে খারাপ নয়। গত দুটি বছর তো ব্যবসা বেশ খারাপ ছিল। আর আজ চাঁদ রাতকে কেন্দ্র করেও ক্রেতা কম। বিক্রিও কম। বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ।

চাঁদ রাতে ক্রেতা সমাগম ও বিক্রির বিষয়ে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ইজি ফ্যাশন হাউজের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নাজমুল শেখ।

স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা রাজধানীর ফুটপাতের দোকান। নিজেদের সাধ্যের মধ্যে পরিবারের সবার জন্যই এখান থেকে কেনাকাটা করেন তারা। নিউ মার্কেট ও মোহাম্মদপুরের ফুটপাতের বাজারে আজ সন্ধ্যার পর বেশ ভিড় দেখা গেছে।

নিউ মার্কেটের ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন মোহাম্মদ রতন মিয়া। ঈদের বিক্রি কেমন জানতে চাইলে বলেন, বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। যতটা প্রত্যাশা করেছি তার চেয়েও ভালো। এবারের ঈদটা ভালোই যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Small businesses, daily earners scorched by heatwave

After parking his motorcycle and removing his helmet, a young biker opened a red umbrella and stood on the footpath.

43m ago