ঘুরে দাঁড়িয়েছে আইসক্রিমের বাজার, এক বছরে প্রবৃদ্ধি ৯৩ শতাংশ

আইসক্রিম খেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে না—এই প্রচারণায় ক্রেতাদের আস্থা ফিরে পেয়েছে দেশের আইসক্রিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত এক বছরে হিমায়িত এই মিষ্টি খাবারটির বিক্রি করোনা-পূর্ব অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আইসক্রিম খেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে না—এই প্রচারণায় ক্রেতাদের আস্থা ফিরে পেয়েছে দেশের আইসক্রিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত এক বছরে হিমায়িত মিষ্টি স্বাদের খাবারটির বিক্রি করোনা-পূর্ব অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

২০২১ সালে আইসক্রিমের বাজার আগের বছরের তুলনায় ৯৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪১০ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে দেশের আইসক্রিমের বাজার ছিল ৭৩০ কোটি টাকার। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ নাগাদ এই শিল্পের বাজার ২ হাজার ৬০০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।

করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে ২০১৯ সালে আইসক্রিমের বাজারের আকার ছিল ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার।

সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলাদেশি আইসক্রিম ব্র্যান্ড ইগলুর চিফ অপারেটিং অফিসার শামীম আহমেদ বলেন, 'মানুষ বুঝতে পেরেছে আইসক্রিমের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না, তাই এই খাত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।'

'এ ছাড়া, মহামারির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে উৎপাদনকারীরা এখন তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণের কথাও ভাবছেন', যোগ করেন তিনি।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নের কারণেও আইসক্রিমের বাজার বড় হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এখন এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের দোকানগুলোতেও আইসক্রিম পাওয়া যায়।'

শামীম আরও জানান, বাংলাদেশের আইসক্রিম শিল্পে কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই শিল্পে এখনো বড় আকারের সুযোগ রয়েছে, যোগ করেন তিনি।

দেশের বাৎসরিক ৬ কোটি লিটার আইসক্রিমের চাহিদা মেটায় ইগলু, পোলার, লোভেল্লো, কোয়ালিটি, জা এন জি, ব্লুপ ও স্যাভয় ব্র্যান্ডগুলো।

মোট উৎপাদনের ৩৮ শতাংশ নিয়ে দেশে আইসক্রিমের বাজারে শীর্ষে আছে ইগলু। এর পরে আছে পোলার (২৭ শতাংশ), লোভেল্লো (১৪ শতাংশ) ও কোয়ালিটি (৯ শতাংশ)।

বাকি সব ব্র্যান্ড মিলে ১২ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এই খাতের মোট বিনিয়োগ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও, ধারণা করা হয় এর পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা।

শামীম জানান, মহামারি আঘাত হানার আগে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল। এখন প্রতি বছর একজন মানুষ গড়ে মাত্র ৩৩৩ মিলিলিটার আইসক্রিম খান।

দেশের উৎপাদনকারীরা প্রায় ৪০ ধরনের আইসক্রিম বিক্রি করেন, যার মধ্যে আছে স্টিক, কাপ, কোন, টাব, কেক এবং আরও অন্যান্য পণ্য। সব ধরনের আইসক্রিমের মধ্যে ভ্যানিলা স্বাদের আইসক্রিম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

দুধ, দুধ থেকে পাওয়া ফ্যাট, ভেজিটেবল ফ্যাট ও চিনির মতো কাঁচামাল আমদানির জন্য দেশের আইসক্রিম শিল্প ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ওপর নির্ভরশীল।

কোয়ালিটি আইসক্রিমের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণের হার কমে যাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইসক্রিমের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তবে উপকরণ ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে।

সাইফুলের মতে, উৎপাদনকারীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেও ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লোভেল্লো আইসক্রিমের কোম্পানি সচিব একেএম জাকারিয়া হোসেন জানান, যেহেতু দেশে করোনাভাইরাসের মারাত্মক পর্যায়ের সংক্রমণ ঘটেনি, তাই এই শিল্প দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।

তিনি এখন আশা করছেন আগের মতো সংক্রমণের হার আর বাড়বে না এবং বিক্রিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

এছাড়াও, পণ্য হিসেবে খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে আইসক্রিম বেশ জনপ্রিয়, কারণ একে খুব সহজে সংরক্ষণ করা যায় এবং ভালো আয় হয়। জাকারিয়া বলেন, এটি বাজারের দ্রুত সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।

গোল্ডেন হারভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেডের (ব্লুপ) কোম্পানি সেক্রেটারি নির্মল চন্দ্র সর্দার জানান, আইসক্রিম উৎপাদকরা ২০২১ সালে আগের বছরের চেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে কারণ ওই বছরটি খুব খারাপ গেছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

4h ago