আলুর দাম কমে যাওয়ায় কেজিতে সাড়ে ৫ টাকা লোকসান সংরক্ষণকারীদের
বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ৫ টাকা করে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে যশোর অঞ্চলের আলু সংরক্ষণকারী চাষি ও ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষিত প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন আলুতে তাদের ১৬ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হতে পারে বলে জানিয়েছে যশোর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
লোকসান থেকে বাঁচতে প্রতি কেজি আলুর দাম ১৮ থেকে ১৯ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
যশোর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর যশোরের ১০টি হিমাগারে ৪০ হাজার ৮২ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে মালঞ্চির সেনাকল্যাণ কোল্ড স্টোরে ৪ হাজার মেট্রিক টন, ঝিকরগাছার গদখালির রজনীগন্ধ্যা কোল্ড স্টোরে ৮ হাজার ৫ শ ৮০ মেট্রিক টন, রাজারহাটের এআরএ কোল্ড স্টোরে ২ হাজার ৫ শ মেট্রিক টন, টাওয়ার কোল্ড স্টোরে ৪ হাজার ৫ শ ৫০ মেট্রিক টন, বাঘারপাড়ার গাইদঘাটের সরদার কোল্ড স্টোরে ৬ হাজার মেট্রিক টন, চুড়ামনকাটির আলী কোল্ড স্টোরে এক হাজার ৬ শ ৪০ মেট্রিক টন, চৌগাছার ডিভাইন কোল্ড স্টোরে ৬ হাজার ৩ শ ৮০ মেট্রিক টন, বিএডিসি হিমাগারে এক হাজার মেট্রিক টন, নাভারণের সুন্দরবন কোল্ড স্টোরে এক হাজার ৬ শ ৫০ মেট্রিক টন এবং চৌগাছার ডিভাইন অ্যাগ্রো টিস্যু কালচার হিমাগারে ৩ হাজার ৮ শ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে, টিস্যু কালচার হিমাগারে রক্ষিত আলু বীজ হিসেবে বিক্রি করা হবে।
এখন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৯ শ ৪৯ মেট্রিক টন আলু বিক্রি হয়েছে। ১০টি হিমাগারে এখনো ২৯ হাজার একশ ৩৩ মেট্রিক টন আলু পড়ে আছে।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছর প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণ করতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের খরচ হয়েছে ১৮ টাকা। অথচ হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে সাড়ে ১২ টাকায়। প্রতি কেজি আলুতে তাদের লোকসান হচ্ছে সাড়ে ৫ টাকা করে। সেই হিসেবে তাদের মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।
যশোরের রজনীগন্ধ্যা কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার কাজী সাজেদুর রহমান শামীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর প্রতিদিন কোল্ড স্টোর থেকে ১৫ শ থেকে ১৬ শ বস্তা আলু বের হতো। বর্তমানে তার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ বস্তায়।' এ ছাড়া, রজনীগন্ধ্যা হিমাগারে এখনো এক লাখ ৬ হাজার বস্তা আলু সংরতি আছে বলেও জানান শামীম।
তিনি আরও বলেন, 'আলু সংরক্ষণকারীরা এবার ব্যাপক লোকসানের মুখে আছে। কমপক্ষে ১৮ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলে তাদের পুঁজি বাঁচবে। তা না হলে অনেকেই পথে বসতে হবে।'
যশোর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, যশোরের বাজারে প্রতি কেজি আলু ১৫-১৬ টাকা খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা দরে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয়ভাবে হিমাগার পর্যায়ে আলুর মূল্য বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। সারা দেশে একযোগে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে কৃষক ও সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীরা বাঁচবে।'
তিনি আরও বলেন, 'নভেম্বরের শেষ দিকে ফের নতুন আলু উঠতে শুরু করবে। তার আগেই সংরক্ষণকারীদের হিমাগার খালি করতে হবে।'
Comments