ফোর-জি ব্যবহার বাড়াতে সিম-লকড ফোন চায় মোবাইল অপারেটরগুলো

দেশে আরও বেশি মানুষকে স্মার্টফোন ও ফোর-জি সেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে সরকারের কাছে কিস্তিতে ও কম খরচে নেটওয়ার্ক-লকড বা সিম-লকড প্রযুক্তির হ্যান্ডসেট বিক্রির অনুমোদন চেয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সহায়তায় ১২ থেকে ২৪ মাসের কিস্তিতে ফোর-জি হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে চায় তারা।
ছবি: এস কে এনামুল হক

দেশে আরও বেশি মানুষকে স্মার্টফোন ও ফোর-জি সেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে সরকারের কাছে কিস্তিতে ও কম খরচে নেটওয়ার্ক-লকড বা সিম-লকড প্রযুক্তির হ্যান্ডসেট বিক্রির অনুমোদন চেয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সহায়তায় ১২ থেকে ২৪ মাসের কিস্তিতে ফোর-জি হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে চায় তারা।
সিম-লক বা নেটওয়ার্ক-লক এমন একটি কারিগরি প্রযুক্তি, যেখানে যে অপারেটর থেকে ফোনটি কেনা হবে, কিস্তি চলাকালীন সেই অপারেটরের সিমই ব্যবহার করতে হবে। কিস্তির টাকা পরিশোধ হওয়ার পর গ্রাহক চাইলে অন্য যেকোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
স্মার্টফোনের দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশে ফোর-জি গ্রাহক সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না। তাই অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এবং হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি যৌথভাবে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’ 
দেশে হ্যান্ডসেটের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে এবং এ কারণে কিস্তিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রিই যথেষ্ট নয় বলে মত দেন তিনি। 
তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের আকর্ষণীয় বান্ডেল অফার দিতে হবে অপারেটরদের। তাহলেই দ্রুতগতিতে ফোর-জি গ্রাহক বাড়বে।’ 
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের কোনো একটি অপারেটরের কাছ থেকে হ্যান্ডসেট কিনতে হবে এবং কিস্তি পরিশোধের সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে অবশ্যই ওই অপারেটরের সিমই ব্যবহার করতে হবে। 
বাংলাদেশে প্রথম ফোর-জি চালু হয় ২০১৮ সালে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৫ শতাংশকে ফোর-জির আওতায় নিয়ে আসার সক্ষমতা থাকলেও, বর্তমানে কেবল ২৮ শতাংশ গ্রাহক এ সেবা ব্যবহার করছেন। 
গত কয়েক বছরে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা সন্তুষ্ট নন। 
অপারেটরগুলো বলছে, তারা ৩৬ হাজারের বেশি ফোর-জি টাওয়ার স্থাপন করেছে এবং স্পেকট্রাম কেনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
অ্যামটবের তথ্য অনুসারে, ফোর-জি সেবায় চারটি অপারেটর ২৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ফোর-জি গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে এখন নির্দিষ্ট একটি ক্যারিয়ারে লক করা হ্যান্ডসেট কিস্তিতে বিক্রির পরিকল্পনা করছে অ্যামটব। 
বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের সিম-লকড হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা হয়। ভারতের জিও নিজেদের ব্র্যান্ডের অধীনে ফোর-জি সেবা দিয়ে থাকে। হ্যান্ডসেটটি শুধু ওই কোম্পানির সিম দিয়েই ব্যবহার করা যায়। 
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষকে ফোর-জির আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে অপারেটরগুলো। তাদের হিসাব অনুসারে, ২০২১ সালে ৪০ শতাংশ গ্রাহক, ২০২২ সালে ৬০ শতাংশ গ্রাহক, ২০২৩ সালে ৭৫ শতাংশ গ্রাহক, ২০২৪ সালে ৮৫ শতাংশ গ্রাহক এবং ২০২৫ সালে শতভাগ গ্রাহক ফোর-জি ব্যবহার করবে।
বিটিআরসির তথ্য বলছে, দেশের ১৭৩ মিলিয়ন মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ১০১ মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ টু-জি ব্যবহার করে থাকেন। থ্রি-জি ব্যবহার করেন ২৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ফোর-জি ও থ্রি-জি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। 
ফোর-জি সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোনের দাম বেশি হওয়ার কারণেই এ অবস্থা বলে অ্যামটবের অভিযোগ। 
দেশের আট কোটিরও বেশি গ্রাহক এখনো বেসিক বা ফিচার ফোনই ব্যবহার করছেন। ফিচার ফোনের দামে যদি তাদের হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে তাদের ফোর-জির আওতায় আনা সম্ভব। 
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নেটওয়ার্ক অপারেটররা ফোনে হ্যান্ডসেট কোম্পানির নামের বদলে নিজেদের ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করতে পারে না। আমরা কো-ব্র্যান্ডিংয়ে যেতে রাজি হয়েছি। এছাড়া, তারা বিদ্যমান ব্যান্ডের হ্যান্ডসেটও বিক্রি করতে পারে।’ 
তিনি বলেন, দাম কমানোর ব্যাপারে ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোর কিছুই করার নেই। কারণ, এখানে শুল্কসহ নানা বিষয় জড়িত থাকে। 
‘একজন গ্রাহক তিন থেকে চার বছরে একটি ফোন কিনে থাকে, ব্যবহার করে প্রতিদিন। তাই নেটওয়ার্ক লকড হোক আর না হোক, অপারেটরদের উচিত হ্যান্ডসেট কেনার সময় গ্রাহকদের আকর্ষণীয় অফার দেওয়া’, জাকারিয়া শহীদ মত দেন। 
অ্যামটবের মহাসচিব এসএম ফরহাদ জানান, বিটিআরসির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে মোবাইল অপারেটর ও হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যারিয়ার-লকড বা সিম-লকড ফোনের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। 

 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi ship hijacked by Somalian pirates

MV Abdullah: Pirates bring in food as stock start to deplete

As food stock in the hijacked Bangladeshi ship MV Abdullah was depleting, pirates recently started bringing in food.

15h ago