পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক গণহত্যার স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বিচারের শহর বলে পরিচিত নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে একটি সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক গণহত্যার স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বিচারের শহর বলে পরিচিত নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে একটি সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।

ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

গতকাল মঙ্গলবার হেগের পার্লামেন্ট ভবন সংযুক্ত ইন্টারন্যাশনাল পারসেন্ট্রামের নিউস্পোর্টে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা প্রেসক্লাবে একই ইস্যুতে অনুষ্ঠিত জেনেভা সম্মেলনের ফলোআপ এই সম্মেলনটি।

আয়োজনের শুরুতে 'ওয়ার ক্রাইমস ১৯৭১' শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজন। মানবাধিকার লঙ্ঘন মুক্ত বিশ্ব গঠন এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য গণহত্যার স্বীকৃতি অপরিহার্য। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি কোনো অপরাধকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে সেই অপরাধ পুনরায় ঘটানোর দরজা খোলা থাকে। ঠিক সেটাই আজ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য জায়গায়।

তারা আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশ গণহত্যা আজ ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে।

'গণহত্যা' নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্য, হংকং, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, কানাডা এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে আফগান, সিন্ধু, বেলুচ, পশতুনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বক্তারা বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ, কাবুলে কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কানাডার সাবেক মন্ত্রী ক্রিস্টোফার এ. আলেকজান্ডার, বাংলাদেশে গণহত্যার শিকার পরিবারের সদস্য অধ্যাপক ড. নুজহাত চৌধুরী, বেলজিয়াম ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের বোর্ড সদস্য ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন, সুইস ইন্টারস্ট্র্যাটেজি গ্রুপের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ও 'ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ' পুরস্কার প্রাপ্ত ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, হংকং (সিন্ধু) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক বাসির নাভিদ, পশতুন টাইমসের সম্পাদক ও গবেষক আওরঙ্গ জেব খান জালমায়, ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের (আইসিএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ড. রায়হান রশিদ এবং নেদারল্যান্ডস ইবিএফ এর সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া।

ক্রিস্টোফার এ. আলেকজান্ডার বলেন, '১৯৭১ বাংলাদেশের শুধু জন্য একটি ট্র্যাজেডি ছিল না, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেসময় প্রচলিত যুদ্ধ রীতি থেকে সড়ে গিয়েছিল।'

ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, 'আমরা খ্যাতি নিয়ে বসে থাকতে পারি না। ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে। অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে আমাদের এই ধরনের সভা চালিয়ে যেতে হবে। ১৯৭১ সম্পর্কে অব্যাহতভাবে মানুষকে জানাতে হবে। সমমনাদের সঙ্গে এক হতে হবে এবং নতুন বন্ধুত্ব করতে হবে। বিশেষ করে আফগান, বেলুচ ও হাজারাদের সঙ্গে।'

ঢাকা থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় অধ্যাপক ড. নুজহাত চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে আমাদের সঙ্গে যা করেছে, এখন বেলুচিস্তানেও একই কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের আখড়া হয়ে উঠেছে, তারা তালেবানদের উত্থানে সহায়তা করেছে। পাকিস্তান শুধু নিজ দেশেই সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে না, সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে তাদের সিক্রেট সার্ভিস আইএসআই এখনও ধর্মের নামে বাংলাদেশে শান্তি নষ্ট করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Diagnose dengue with ease at home

People who suspect that they have dengue may soon breathe a little easier as they will not have to take on the hassle of a hospital visit to confirm or dispel the fear.

9h ago