‘বনে অনিয়ন্ত্রিত মানুষের প্রবেশ বন্যপ্রাণীকে আতঙ্কিত করে’
বাঘের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর অনুকূল পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে সুন্দরবনে পর্যটনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, 'বনে অনিয়ন্ত্রিত মানুষের প্রবেশ বন্যপ্রাণীকে আতঙ্কিত করে। তাই বনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।'
উপমন্ত্রী বলেন, 'বংশবৃদ্ধির জন্যে বাঘ যে ধরনের পরিবেশ চায়, সেটা আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।'
'অনেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বনের ভেতরে প্রবেশ করেন। কয়েক মাস আগে যখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল, এক মন্ত্রীর ছেলে ৪০০ জনের দলবল নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকতে চেয়েছিল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করার পরও তাদেরকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি', বলেন তিনি।
হাবিবুন নাহার বলেন, 'একটা সময় ছিল যখন লোকজন যা খুশি তা করতে পারত। এখন সে সময় আর নেই।'
তিনি সে সময় মন্ত্রণালয়ের অপ্রতুল বাজেট, বনের ভেতর অপরাধীদের ধরার পরও শাস্তি না হওয়া ও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিবেশবিরোধী মানসিকতাকে বনের জন্যে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, 'বিদ্যমান আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে বনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পিকনিক স্পটগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে।'
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, 'এটা দুঃখজনক যে বনের বাঘের সংখ্যার চেয়ে আমাদের এখন বন্দি বাঘের সংখ্যা বেশি।'
টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাঘ সংরক্ষণে ভারতে যে উদ্যোগ বা কার্যক্রম, সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।'
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন, '২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের বাঘ সম্মেলনের পর থেকে বাঘ সংরক্ষণে গতি পেয়েছে।'
বাঘ সংরক্ষণে জিরো পোচিংয়ের (বন্যপ্রাণী পাচার শূন্য পর্যায়ে নিয়ে আসা) ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, 'যেভাবেই হোক বনের ভেতর যে শিকারি দল পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে থামাতে হবে। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, 'সার্বিকভাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা না করে বাঘ সংরক্ষণ করা যাবে না।'
সুন্দরবন পশ্চিমের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাছের মো. মহসিন তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, 'গত ২০ বছরে ৫১ বাঘ বিভিন্ন ঘটনায় মারা গেছে। একই সময়ে বাঘ-মানুষ সংঘর্ষে মারা গেছে ২১২ মানুষও।'
'গত শতাব্দীর শুরুতে দেশের ১৩ জেলায় বাঘের উপস্থিতি ছিল। এখন সেটা মাত্র তিনটি জেলায় সীমাবদ্ধ। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মাঝেমধ্যে কিছু বাঘ পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে। পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে সেখানে বাঘের বংশবিস্তার সম্ভব', বলেন তিনি।
এ ছাড়াও, সুন্দরবনের ভেতর বন্যা ও সাইক্লোনের কারণে পানির উচ্চতা বাড়ে। যখন বন্যপ্রাণীর কোথাও আশ্রয়ে নেওয়ার জায়গা থাকে না। তাই সেখানে মাটির কিল্লা নির্মাণের প্রস্তাব করেন বন কর্মকর্তা আবু নাছের।
Comments