জোয়ারের পানি বাড়লেই বাড়ে দুর্ভোগ

সিডরের ধকল এখনও কাটেনি পায়রা পাড়ের মানুষের

প্রমত্তা পায়রা নদীর পাড়ের জেলা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রাম ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও এ বছর ইয়াসের সময়ও প্লাবিত হয় এখানকার জনবসতি। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও, বর্ষাকালে প্রতি অমাবস্যা আর পূর্ণিমার স্ফীত জোয়ারে প্লাবিত হয় গ্রামের অধিকাংশ এলাকা।
বর্ষাকালে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার স্ফীত জোয়ারে প্লাবিত হয় পায়রা নদীর পাড়ের গ্রামগুলো। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

প্রমত্তা পায়রা নদীর পাড়ের জেলা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রাম ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও এ বছর ইয়াসের সময়ও প্লাবিত হয় এখানকার জনবসতি। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও, বর্ষাকালে প্রতি অমাবস্যা আর পূর্ণিমার স্ফীত জোয়ারে প্লাবিত হয় গ্রামের অধিকাংশ এলাকা।

সিডরের সময় বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে প্লাবিত হয় মির্জাগঞ্জের নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকা। ভেসে যায় বাড়িঘর, গবাদিপশু। সে সময় এখানকার অন্তত ১১৫ জন মারা গিয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন ওই এলাকার মানুষের দাবি ছিল উঁচু বাঁধ। কিন্তু আজও বাঁধ উঁচু করা হয়নি। গ্রামে নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। এখনও তাদের জীবন ও সম্পদ অরক্ষিত।

এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীর পানি চার থেকে পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। বাঁধ উপচে নদীর পাড়ের লোকালয় জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরের মালামাল ভেসে যায়, কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

পায়রা নদীর পাড়ের দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রামে ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন গৃহবধূ রেমিজা বেগম (৪৫)। স্বামী নুরুল হক দিনমজুর। এক ছেলে তানভীর (১১), দুই মেয়ে সুমাইয়া (১০) ও সুরাইয়া (৫) নিয়ে পাঁচ জনের সংসার তাদের। ১৪ বছর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে তার তিন বছরের শিশু কন্যা তানজিলা নিখোঁজ হয়। ১১ দিন পর প্রায় চার কিলোমিটার দুরে একটি গাছের ডালের সঙ্গে তানজিলার মরদেহ পাওয়া যায়।

জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে রেমিজার বসতঘর। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলেই প্লাবিত হয় তার বসতঘর। নদীর তীরে উঁচু বাঁধ না থাকায় জোয়ারে ঘরের মালামালও ভেসে যায়।

রেমিজা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে এমনিতেই নদীর পানি বৃদ্ধি পায় এবং নিচু বাঁধ উপচে  পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসের সময় আশ্রয় নিতে এই গ্রামে আশ্রয়কেন্দ্রও নেই।’

রেমিজা বেগমের মতো অনেকেই এখনও এখানে দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। গ্রামের মোসলেম হাওলাদারের দুই বছরের মেয়ে মারিয়া সিডরের জলোচ্ছ্বাসে মারা গিয়েছিল। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে নির্ঘুম কাটাতে হয়। পায়রা নদীর পানি বাড়লেই প্লাবিত হয় মির্জাগঞ্জ গ্রামের নদীর পাড়ের গ্রামগুলো।

ফাতিমা বিবি (৫০) জানান, নদী ভেঙে এখন তার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। স্বামী আজাহার মল্লিক ও তিন সন্তান নিয়ে নদীর পাড়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম লিটন সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জ গ্রামসহ পিঁপড়াখালী, ভাজনাকদমতলা, সুন্দ্রা, আন্দুয়া গ্রামে কোন সাইক্লোন শেল্টার নেই। এসব এলাকার নড়বড়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে সহজেই জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম ঝুঁকিতে থাকেন। বহুবার মন্ত্রনালয়ে সাইক্লোন শেল্টারের চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।’

যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, ‘ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে মির্জাগঞ্জের পায়রা পাড়ের মির্জাগঞ্জ গ্রামসহ বিভিন্ন অংশে তিন কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পায়রা পাড়ের মানুষের জীবন ও সম্পদ নিরাপত্তার জন্য পায়রা পাড়ে মেগা প্রকল্প নিয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

Comments