মোংলা থেকে ৯৬০ কি. মি. দূরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ, সাগরে ২ নম্বর সংকেত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আরও উত্তরপশ্চিম দিতে এগিয়ে একই অবস্থান করছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৮৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগুতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বরে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য জায়গায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। চলতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। তার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কথা।
ডিসেম্বরে ক্রমান্বয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। তবে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। মাসের শেষ ভাগে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
নভেম্বরে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাতের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ৯ নভেম্বর দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর আশে পাশের এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। ১১ নভেম্বর এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। ওই রাতেই এটি ভারতের উত্তর তামিলনাড়ু-দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করে উত্তর তামিলনাড়ু ও এর আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করে। এরপর এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে দুর্বল হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পরবর্তীতে লঘুচাপে পরিণত হয় এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। নিম্নচাপের প্রভাবে ১২ থেকে ১৫ নভেম্বর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
১৪ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও এর আশে পাশের এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। ১৮ নভেম্বর এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশে পাশের এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয় এবং ওই দিনই এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরদিন এটি উত্তর তামিল নাড়ু-দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করে।
গত মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। নভেম্বরে কক্সবাজার ও ফেনীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
Comments