ভাঙনের কবলে মানিকগঞ্জের ৩ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা
পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে মানিকগঞ্জের শিবালয়, হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার কয়েকশ ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এসব অঞ্চলের মানুষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুরে যমুনা ও হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টি বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই ভিটে-মাটি হারিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ ভিটে-মাটি আঁকড়ে রয়েছেন।
ভাঙনকবলিত এসব এলাকার অনেকেই জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার নদীতে ভেঙেছে তাদের বাড়ি-ঘর-ভিটে-মাটি। এবার ভেঙে গেলে নতুন করে আর বাড়ি-ঘর তৈরি করতে পারবেন না।
ষাটোর্ধ্ব মুকুল মোল্লা বলেন, ‘ভাঙতে ভাঙতে নদী বাড়ির কাছে চইলা আইছে। যে কোনো সময় সবকিছু নদীতে চাইলা যাইব। বউ-পোলাপান নিয়া কই যামু। এই চিন্তায় রাতে ঘুম অয় না।’
রেখা রাণী হালদার বলেন, ‘এমনিতেই সংসার চলে না। উনি নদীতে মাছ ধইরা বাজারে বেইচা যা পায়, তাই দিয়া কোনোরকমে বাইচা আছি। এখন ঘর-বাড়ি যদি নদীতে চইলা যায়, তাইলে থাকুম কই?’
এদিকে, পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কাঞ্চনপুর গ্রামের আবুল ফজল বলেন, ‘আমার এই ৯০ বছর বয়সে বহু ভাঙন দেখছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার আমার বাড়ি ভাঙছে। একশ ডিসিমাল বাড়িডা এবারও ভাঙছে। এই ব্যাগগুলা যদি একমাস আগে ফালাইতো, তাইলে আমার বাড়িডা এবার ভাঙতো না। জীবন ভইরা দেখছি, উনারা ভাঙার আগে কিছু করে না। ভাঙা শুরু অইলে ব্যাগ ফালায়, দৌড়া-দৌড়ি করে। আগে যদি কিছু করতো তাইলে কাম অইতো।’
ভাঙন কবলিত ওই তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, চলমান ভাঙনের কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র পাঠানো হয়েছে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলার কাজও শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির মাধ্যমে সরকারি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুর ও আনুলিয়া গ্রামের ভাঙনরোধে ৩০০ মিটার এলাকায় ১৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া, তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন।’
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন বলেন, ‘মানিকগঞ্জ একটি নদীভাঙন প্রবণ এলাকা। চলতি বছর পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হওয়ার পর থেকেই ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকায় ৪৫ হাজার জিও ব্যাগ, ধুলসুরা এলাকায় ৬০ হাজার ব্যাগ, দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা এলাকায় ১৮ হাজার ব্যাগ এবং শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুর-আনুলিয়া এলাকায় ফেলা হচ্ছে।’
‘এছাড়া, কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনরোধে মানিকগঞ্জ সদর ও ঘিওর উপজেলার ২৫টি পয়েন্টে আগাম এক লাখ ১০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে, আগামী শুষ্কমৌসুমে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় চার কিলোমিটার, ধুলসুরা এলাকায় এক হাজার ২০০ মিটার এবং দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামার এলাকায় দুই কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে’, বলেন মাইন উদ্দিন।
Comments