বন্যায় সিলেট নগরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৫৪ হাজার পরিবার

অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও উপচে পড়া সুরমা নদীর পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে নগর ও নগরের উপকন্ঠের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
বন্যায় আশ্রয়ের খোঁজে সিলেট নগরের কাষ্টঘর এলাকার এক পরিবার। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও উপচে পড়া সুরমা নদীর পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে নগর ও নগরের উপকন্ঠের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

মঙ্গলবার থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত নগরীর ৫৪ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হতে থাকায় খুব শীঘ্রই এসব এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

পানিতে ভেসে গেছে নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকা শাজজালাল উপশহর। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এ সকল এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই ভুগছেন দৈনন্দিন ব্যবহার্য ও খাবার পানি সংকটে। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, আজ সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের নগর এলাকায় বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকালের চেয়ে ১৩ সেন্টিমিটার বেশি।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন দক্ষিণ সুরমার এলাকার বাসিন্দারা। সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের প্রায় সব এলাকাই বন্যা ও জলাবদ্ধতা কবলিত হওয়ায় ৪২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্যায় নগরের প্রাণকেন্দ্র সোবহানীঘাট এলাকার চিত্র। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র ‍সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর পানি বাড়তে থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা ‍সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণ সুরমা সাবস্টেশনের অধীনে সব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোন সম্ভাবনা না থাকায় আমরা নিশ্চিত বলতে পারছি না যে কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।'

দক্ষিণ সুরমার পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর অধীনে থাকা শাহজালাল উপশহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

শাহজালাল উপশহরের ই ব্লকের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম পলাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা থেকেই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জমানো পানি দিয়ে আজকের দিনটা চলতে পারে, তারপর থেকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এলাকায় যানচলাচলও প্রায় বন্ধ। এ অবস্থায় অন্য কোথাও যে যাবো সে উপায়ও নেই।'

নগরের উপশহর এলাকার চিত্র। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপশহরের প্রায় সব বাসার বিদ্যুতের মিটার নিচতলায় বা আন্ডারগ্রাউন্ডে। তার সবই এখন পানির নিচে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। বিকল্প উপায় হিসেবে পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে পানি উঠানোর ব্যবস্থা করা যেত, কিন্তু সেটাও সম্ভব হবে না বেশিরভাগ মোটর জলমগ্ন থাকায়। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।'

এদিকে গতকাল প্রায় সারাদিন বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে নগরের তালতলাসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানিয়েছেন এই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম।

তিনি বলেন, 'অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তালতলা এলাকার বিদ্যুৎ গতকাল সন্ধ্যায় পুনরায় চালু করা হয়। তবে এখন ‍সুরমা নদী তীরবর্তী কানিশাইল, তোপখানা এবং শামীমাবাদ এলাকা নিয়ে আশঙ্কা আছে। সেখানে পানি বাড়লে দ্রুতই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।'

সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় খোলা ১৬টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ১০টিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য জন্য ১ হাজার ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের বিকল্প কিছু নেই। আমরা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতগুলো এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু এলাকায় পানি পরিশোধনের ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

3h ago