পটুয়াখালীতে ১৫ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত
বঙ্গোসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীতে এবারের বৃষ্টিপাত ১৫ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ২৭ জুলাই সকাল থেকে ৩১ জুলাই দুপুর পর্যন্ত পটুয়াখালী আবহাওয়া দপ্তর ৩৯২ দশমিক ০২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। ২০০৬ সালের জানুয়ারির পর জেলায় এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
আজ শনিবার পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে, নিম্নাঞ্চল ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে প্রায় ১৮ কোটি টাকার মাছ।
পটুয়াখালী বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলায় ছয় হাজার ৬৭টি পুকুর ও ৫৫০টি ঘের প্লাবিত হয়ে ১৮ কোটি ২১ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
এর মধ্যে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮ কোটি ২৭ লাখ, কলাপাড়ায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ, গলাচিপায় ২ কোটি ৫৬ লাখ, সদর উপজেলায় ২ কোটি ৪০ লাখ, দুমকিতে ১ কোটি ৪০ লাখ ও মির্জাগঞ্জে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানান তিনি।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ গ্রামের মাছের ঘের মালিক দবির গাজী বলেন, এ বছর ঋণ করে মাছের ঘের করেছি। ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ ছিল। ভারী বর্ষণের কারণে পানিতে আমার ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে। কিভাবে ঋণ শোধ করব, এখন সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, 'জেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ হয়েছে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ও আমনের বীজতলা ১৪ হাজার ৯৮০ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার হেক্টর আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।'
সূত্র জানায়, জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনা উপজেলার শতাধিক চর ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ভারী বৃষ্টিতে পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন স্থানেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় চত্বর পানিতে তলিয়ে গেছে। পটুয়াখালী শহরের নতুন জেলখানা সড়কের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় চত্বর পানিয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এসব দপ্তরের লোকজন।
পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হালিম সালেহী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভারী বর্ষণে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানির স্রোতে সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামের পায়রা নদীর তীরে বাঁধের ২০ মিটার ও মির্জাগঞ্জের বেগমপুর এলাকায় তিনটি পয়েন্টে ৩৮ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সাগরের ঢেউয়ের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ। বাঁধটি পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় জরুরি মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে।
Comments