ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ সন্ধ্যায় ভারতে আঘাত হানতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় গুলাব আজ রোববার সন্ধ্যায় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বিকেলে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় গুলাব আজ মধ্যরাতে ভারতের উপকূল অতিক্রম করবে বলে বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যার মাঝামাঝি অংশে এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। গতকাল যে বৃষ্টি হয়েছে সেটাও স্থানীয় মেঘের কারণে। যে কারণে গরম কমছে না। স্থানীয় মেঘ থেকে আরও কিছু দিন বৃষ্টিপাত হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের এখানে গরম কমতে শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের গভীর সমুদ্রে ঢেউ হবে। উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে বলেও মনে হচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর পাশে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'গুলাব' আরও পশ্চিম দিকে এগিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় গুলাব কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায়৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, নদীবন্দরে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূল পার হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, কালীঙ্গাপাড়া ও গোপালপুর মাঝামাঝি অংশে ঝড়টি স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ৮৫ কিলোমিটার। তবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এর প্রভাবে অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। তবে কোথাও কোথাও ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাবে আসার পরে ঝড়ে রূপ নিতে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকায় কিছু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় 'কমলা' সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া, উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নৌবাহিনী জাহাজ ও এয়ারক্র্যাফট প্রস্তুত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
সতর্কতার অংশ হিসেবে ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার কারণে 'কমলা' সতর্কতা দেখাতে বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রেল ও সড়কপথ ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দ্য ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের পরিচালক সত্য নারায়ণ প্রধান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ১৮টি দল প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি উড়িষ্যা এবং ৫টি দল অন্ধ্রপ্রদেশে কাজ করবে।
চলতি বছরে এটি তৃতীয় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে ভারতে।
Comments