কুড়িগ্রামে শীতেও ভাঙছে তিস্তা

এই কয়েকদিন আগেও নেছার উদ্দিনের (৬৫) বসতভিটা ছিল, ছিল আবাদি জমি ও ফলের বাগান। এখন আর কিছুই নেই। তিনি ৭ জনের পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। পরিবারটির এখন দিন কাটছে অর্ধাহারে।
তিস্তাপাড়ে নির্বাক গতিয়াশ্যাম গ্রামের কৃষক নেছার উদ্দিন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

এই কয়েকদিন আগেও নেছার উদ্দিনের (৬৫) বসতভিটা ছিল, ছিল আবাদি জমি ও ফলের বাগান। এখন আর কিছুই নেই। তিনি ৭ জনের পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। পরিবারটির এখন দিন কাটছে অর্ধাহারে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশ্যাম গ্রামের কৃষক নেছার উদ্দিন সময় পেলে ছুটে যান তিস্তাপাড়ে আর নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন তিস্তায় চলে যাওয়া বসতভিটা ও আবাদি জমির দিকে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তার মতোই কৃষক জাবেদুল ইষরাম (৬০), আখিরুল ইসাম (৫৬), আবেদুল ইসলাম (৪৮) ও আলমগীর হোসেনকে (৬০) দেখা যায় তিস্তাপাড়ে। সবার চোখে-মুখে শুধু নিঃস্ব হওয়ার বেদনা।

নেছার উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চোখের সামনেই বসতভিটা ও ১০ বিঘা আবাদি জমি তিস্তায় চলে গেছে। কয়েকমাস আগেও কৃষি শ্রমিক নিতাম জমিতে কাজ করার জন্য। এখন আমাকেই কাজের সন্ধানে ছুটতে হচ্ছে অন্যের কাছে।'

'সংসারে একবেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা অনাহারে থাকতে হয়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তিস্তা আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন কেড়ে নিয়েছে।'

কৃষক জাবেদুল ইসলাম কান্নাভেজা কণ্ঠে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এইতো কয়েকদিন আগেও হাসি-খুশির সংসার ছিল। কোনো অভাব ছিল না। চোখের সামনেই সব হাসি-আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। তিস্তায় চলে গেছে বসতভিটা ও ১২ বিঘা আবাদি জমি।'

'নিঃস্ব হয়ে এখন ৬ জনের পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। এভাবে তিস্তায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হবো ভাবতেই পারিনি। এখন ঠিক মতো খাবার যোগাড় করতে পারি না।'

গতিয়াশ্যাম গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শীতকালেও তিস্তার ভাঙন থামেনি। প্রতিদিনই আবাদি জমি তিস্তায় চলে যাচ্ছে। আমার বসতভিটাও ভাঙনের হুমকিতে।'

'গত কয়েকমাসে আমার ৭ বিঘা আবাদি জমি তিস্তায় চলে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শীতকালেও তিস্তার ভাঙন থামেনি। প্রতিদিনই আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আমার বসতভিটাও ভাঙনের হুমকিতে।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৫ মাসে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ১৪ উপজেলার ৯০টি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে ১০ হাজার পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বিপুল পরিমাণে আবাদি জমি ও অনেক স্থাপনা।

Comments

The Daily Star  | English

Pollution claims 2.72 lakh lives in one year

Alarming levels of air pollution, unsafe water, poor sanitation, and exposure to lead caused over 2.72 lakh premature deaths in Bangladesh in 2019.

1h ago