উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাড়ছে নদীর পানি, সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার সম্ভাবনা
ঘূর্ণিঝড় অশনির অগ্রভাগের প্রভাবে দেশের আকাশে বজ্র মেঘের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ঝরছে বৃষ্টি। পূর্বাভাস বলছে, আরও অন্তত ৭২ ঘণ্টা এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানির সমতল বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ওই অঞ্চলে অকস্মাৎ বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আজ বুধবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বাড়তে শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু, খোয়াই, গোমতী, তিতাস ও ফেনী নদীর পানির সমতল দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাধারণত একটি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা), মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এবারও তেমন বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে নদ-নদীর পানির সমতল বাড়বে এবং বন্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যদি বন্যা হয়, তাহলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে কয়েকটি পয়েন্টে হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মায় পানির সমতল স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের সিকিম, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি স্টেশনে ৬৪ দশমিক শূন্য মিলিমিটার, ত্রিপুরার আগরতলা স্টেশনে ৩৫ দশমিক শূন্য মিলিমিটার, সিকিমের গ্যাংটক স্টেশনে ৬২ দশমিক শূন্য মিলিমিটার ও আসামের শিলচর স্টেশনে ৩৪ দশমিক শূন্য মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ২৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ১৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণঝড় অশনি ভারতের অন্ধ্র উপকূল ও এর পাশের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে কিছুটা এগিয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় ঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ঝড়ের কেন্দ্রে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
নিরাপদ নৌ-চলাচল নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির অগ্রভাগের প্রভাবে সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ১৪ মে পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে ১৩ তারিখের পরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসবে। ১৪ মে পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি থেকে ভারী ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় কোনো কোনো জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে সিলেটে। এ ছাড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের টেকনাফ, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহে বৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়া থাকবে। কোথাও কোথাও বজ্রপাত হতে পারে।
Comments