
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ২৩ শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের ৮৩ ঘণ্টা পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ভিডিও কলে বৈঠক করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনের একটি কক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আর রোববার ভোররাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা সার্বিক বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং তাদের একদফা দাবির বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা জানান।

বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনে এক মুখপাত্র বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন বিষয়টি সমাধানে সময় লাগবে। তাই আমরা যদি আপাতত অনশন স্থগিত করি এবং আরও আলোচনা চালিয়ে যাই তাতে একটা পথ বেরুবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সঙ্গে অনশনরত শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। তারা বলেছেন যে তারা এই মুহূর্তে অনশন থেকে সরে আসতে পারছেন না। কারণ আমরা একটা দাবিতে থাকতে চাই। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন বন্ধ করবো না।'

এ ছাড়াও, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী আহবান জানালে শিক্ষার্থীরা দ্রুত লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হবে বলে জানান।
পরে শিক্ষামন্ত্রী আরও আলোচনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন এবং আজ দুপুর ১টার পর আবারও আলোচনা হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ওই মুখপাত্র।
মুখপাত্র আরও বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী কারো কোনো ক্ষতি না হয় এমন বিকল্প পথে সমাধানের কথা বললেও আমরা বলেছি যে এই উপাচার্য থাকাটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি।'
তিনি বলেন, 'উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবি নিয়েই আমরা আবারও আলোচনা বসবো এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।'

এ দিকে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কথা শুনেছেন এবং তাদের অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি অনশন ভাঙার আহবান জানিয়েছেন।'
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী কোনো মত দেননি বলেও জানান তিনি।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী তার হেয়ার রোডের বাসভবনে শাবিপ্রবি'র ৫ শিক্ষকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পরিষদের সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন এবং শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহবান জানান।
গত রাতে গণঅনশনের ঘোষণা দেয় শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। রাতেই নতুন করে আরও ৩ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে যোগ দেন।
গত বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিট থেকে অনশন চালিয়ে যাওয়া ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে আজ সকাল পর্যন্ত ১৬ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জানান, 'হাসপাতালে ভর্তি সবাই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। কর্তব্যরত ডাক্তাররা গতকালই জানিয়েছেন যে আজকের মধ্যে তারা মুখে খাবার না খেলে বড় রকমের ক্ষতি হবে।'
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শুরু হয় বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগের দাবির আন্দোলন। এরপর ১৬ জানুয়ারি পুলিশি অ্যাকশনে ৩০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় সেই আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়।
তারপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Comments