রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আবদুল কাইয়ূমের স্মরণসভা

দেশ স্বাধীনের পর আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আবদুল কাইয়ূম স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মীর আব্দুল কাইয়ূম। ছবি: সংগৃহীত

দেশ স্বাধীনের পর আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আবদুল কাইয়ূম স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি সিনেট ভবনে তিন ঘণ্টাব্যাপী এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় কাইয়ুমের মেয়ে ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া সভাপতিত্ব করেন।

মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ূমকে ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহী শহরের ঘোড়ামারা এলাকার বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপহরণ করে হত্যা করে।

স্বাধীনতার পর ৩০ ডিসেম্বর শহরেরে শ্রীরামপুর এলাকায় বাবলাবন গণকবর থেকে আরও ১৬ জনের সঙ্গে কাইয়ূমের মরদেহ পাওয়া যায়।

তার স্মরণ সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন- পদার্থবিজ্ঞানের ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক।

তিনি বলেন, 'কাইয়ূমের নিজ বিভাগের সহকর্মীরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেছিল তারাই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। চিন্তার স্বাধীনতা এবং ছাত্র রাজনীতির অধিকারের পক্ষে তার মতামতের জন্য কাইয়ূমকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।'

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাবলাবন গণকবরের শত শত সাক্ষীর একজন তিনি।

তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস রক্ষায় তার প্রশাসনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অবসরপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক তাসকিনা ফারুক বলেন, তিনি প্রফেসর কাইয়ূমকে দেখেছেন ছাত্রদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদেরকে স্বাধীনতার ব্যপারে আশ্বাস দিতে।

তিনি বলেন, 'আমি তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে তার ধারণাগুলি খোলাখুলিভাবে না বলতে এবং তিনি শোনেননি। বাংলাদেশ যে স্বাধীন হবে সে ব্যপারে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'তার বিভাগের সহকর্মীরা যুদ্ধের পক্ষে তার কার্যকলাপ সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন সরাসরি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করছিল।'

অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক জানান, কাইয়ূমসহ অন্যান্য শহীদের মরদেহ গণকবর থেকে উত্তোলনের কাজ করেছিলেন।

তিনি বলেন, 'সব মরদেহ এক দড়িতে বাঁধা ছিল। যারা এটা দেখেছে সবাই ভেবেছিল এই শহীদদের জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে।'

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, তিনি যখন গণকবর থেকে কাইয়ূমের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পথে লোকজন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছিল।

অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, 'একাত্তরে অধ্যাপক মতিউর রহমান ছিলেন রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর ছিলেন। স্বাধীনতার পরও মতিউর রহমানের ছবি অধ্যাপক কাইয়ূমের ছবির সঙ্গে একত্রে বিভাগে টানানো ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অনুরোধ করেছি, কেউই মতিউর রহমানের প্রতিকৃতি সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয়নি।'

তিনি জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তখন তিনি প্রতিকৃতিটি সরিয়ে দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Our civil society needs to do more to challenge power structures

Over the last year, human rights defenders, demonstrators, and dissenters have been met with harassment, physical aggression, detainment, and maltreatment by the authorities.

7h ago