পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর নজরদারির পরিকল্পনা
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খোলার পর ক্যাম্পাসগুলোতে 'নৈরাজ্য' ও 'জঙ্গিবাদ প্রচার' হওয়ার আশঙ্কা সংক্রান্ত কোনো তথ্য আছে কি না, তা জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি, সার্বিক পরিস্থতি পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় আনবে।
একইসঙ্গে, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ বজায় রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও উপাচার্যদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মঞ্জুরি কমিশনের দুই সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি জানান।
মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে।
জানতে চাইলে বৈঠকের সভাপতি ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটি গোপন বৈঠক ছিল। তাই, আমি এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।'
গত সপ্তাহে পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দেয়। এগুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর যেনো কোনো ধরনের 'অরাজক পরিস্থিতি' তৈরি না হয়, সেজন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।
একইসঙ্গে, মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ধরনের 'জঙ্গিবাদ প্রচার' হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এক বৈঠক নেওয়া সিদ্ধান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয় গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসিকে এই চিঠি পাঠায়।
দ্য ডেইলি স্টার চিঠিটির একটি কপি হাতে পেয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে এক সভার পর গত মঙ্গলবার সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সব শিক্ষার্থীর করোনার টিকার অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সরাসরি ক্লাস শুরু করতে পারবে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু হতে পারে।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করার পর, ১৫ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।
পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ কর্মীদের সতর্ক থাকার এবং তুচ্ছ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে না জড়ানোর আহ্বান জানান বলে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
গতকালের সভায় উপস্থিত কয়েকজন উপাচার্য জানান, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে।
এ বিষয়ে মঞ্জুরি কমিশনের এক সদস্য বলেন, 'উপাচার্যরা সশরীরে ক্লাস চালু হওয়ার পর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির বড় কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন না।'
উপাচার্যরা এটিও বলেছেন, ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের 'জঙ্গিবাদী তৎপরতার' ব্যাপারে তারা সতর্ক আছেন।
মঞ্জুরি কমিশনের ওই সদস্য আরও বলেন, 'কিন্তু, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সভায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
এ ছাড়া, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে সমস্যায় পড়ে, তাহলে মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় আরও বলা হয়, এই সিসিটিভি নজরদারি যাতে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত না করে, সে বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে।
অপর এক সিদ্ধান্তে, ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপাচার্যদের স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক সমিতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়।
জানতে চাইলে মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর সেগুলো পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য 'নৈরাজ্য' ও 'জঙ্গিবাদ প্রচারের' বিষয়ে আলোচনার জন্য সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে অধ্যাপক সাজ্জাদ বলেন, 'নৈরাজ্য নিয়ে আমি কোনো উদ্বেগ দেখছি না।'
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ জানান, পারিবারিক কারণে ব্যস্ত থাকায় তিনি সভায় অংশ নেননি।
অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments