ক্যাম্পাস

করোনা মোকাবিলায় ঢাবির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল এ তথ্য জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রায় ৪৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ হাজার শিক্ষার্থী টিকা নিতে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। ইতোমধ্যে ২০ হাজার শিক্ষার্থী টিকা নেওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আরও ৬ হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও টিকা নেওয়ার এসএমএস পাননি।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো আগামী ৫ অক্টোবর খুলে দিতে গত বুধবার প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি সুপারিশ করেছে। করোনার বিস্তার প্রতিরোধে গত বছরের ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

হল খোলার পর বাকি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ প্রস্তুতি

বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই হলে উঠবেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সুরক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রস্তুতির অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কয়েকটি হল ঘুরে দেখা গেছে, প্রস্তুতি হিসেবে আবাসিক হলগুলোতে ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি হলে হাত ধোয়ার জন্যে বাড়তি বেসিন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির মানতে হলের প্রবেশপথে সতর্ক বার্তা সম্বলিত ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় ৩৯ আসনের আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠেও আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। ডেঙ্গুর কথা চিন্তা করে ১৩ শয্যার আলাদা একটি ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিজয় একাত্তর হলে হাত ধোয়ার বেসিন বসানোর কাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

মেডিকেল সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় খুললে মেডিকেল সেন্টারে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল এহসান গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শনে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেন।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় খুললে আমরা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করব। এর জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।'

করোনার বরাদ্দে অনিশ্চয়তা

করোনা মোকাবিলায় ৯ কোটি টাকা আলাদা বাজেট রাখা হয়েছে। এর পুরোটাই ঘাটতি বাজেট। নিজস্ব আয় থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কাছে করোনার জন্য আলাদা বাজেট চেয়েও কোনো অর্থ না পেয়ে ঘাটতি বাজেট ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এ টাকা সংগ্রহে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বছর করোনার প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের অনেকগুলো খাত বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরিবহন ব্যবহার না করায় ফি মওকুফ করতে হয়েছে। হল বন্ধ থাকায় হলের ফিও মওকুফ করতে হয়েছে।

সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। করোনার জন্য রাখা ৯ কোটি টাকা কোথায় থেকে আসবে, তা এখনও জানে না কর্তৃপক্ষ।

মেডিকেল সেন্টারের সূত্র বলছে, করোনার স্থায়িত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে চিকিৎসা খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখার কথা থাকলেও অর্থ সংকটে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, অন্যান্য বছর ওষুধ ও রি-এজেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হতো ২৬ লাখ টাকা। কিন্তু, এ বছর এ খাতে রাখা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকা। যা কোভিড মোকাবিলায় সামান্য।

বাজেট কমানোর কথা নিশ্চিত করে মেডিকেল সেন্টারের প্রধান ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর করোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় হয়তো ওষুধ কম কিনতে হচ্ছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজেট কমিয়েছে।'

'এটা সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে আমাদের প্রচুর ওষুধ ও রি-এজেন্টের প্রয়োজন পড়বে। এ খাতে মাত্র ৬ লাখ টাকা যথেষ্ট নয়।'

করোনা মোকাবিলা যে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাবদ ১ কোটি, কোভিড-১৯ এর টেস্টিং বাবদ ১ কোটি ও চিকিৎসা সেবা বাবদ ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া, অনুদান খাতে ১ কোটি ও শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে, তাহলে এ ঘাটতি মেটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য হবে।'

মেডিকেল সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান বলেন, 'করোনার চিকিৎসার জন্য কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছাড়া কোথাও সরকারের অনুমতি নেই। এ জন্য আমরা ক্যাম্পাসে আইসোলেশন সেন্টার করছি।'

মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কয়েকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন জেনারেটর কিনেছে। আরও কিছু কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও এখনো তা কেনা হয়নি।

এ ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষ বলেন, 'ইউজিসি করোনা মোকাবিলায় কোনো অর্থ দেয়নি। যার জন্য করোনা সামগ্রী কিনতে অর্থ সংকট রয়েছে।'

বন্ধ হওয়ার পথে করোনা টেস্টিং ল্যাব

অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড টেস্টিং ল্যাব। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ল্যাবটি চালু রাখতে ৬৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান ল্যাবটির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেলেও বাকি ৩৬ লাখ টাকা এখনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরিশোধ করেনি।

করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে গত বছরের মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারস) ভবনে ল্যাবটি স্থাপন করা হয়েছিল। শুরু থেকেই এটি অর্থ সংকটে পড়ে। একবার এর কার্যক্রম বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অর্থে এটি আবার চালু হলেও সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে ল্যাবটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই ল্যাবটিতে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ল্যাবটিতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সম্মানীও এখন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে অর্থ না থাকলে তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ চাইতে পারত। কারণ এ ল্যাবটির প্রয়োজন আছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, তখন এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। কিন্তু, এভাবে চলতে থাকলে ল্যাবটি আমরা এ মাসের পর চালু রাখতে পারব না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ বলেন, 'করোনা টেস্টিং ল্যাবে ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা আমাদের পরিশোধ করতেই হবে। ভাবছি কীভাবে তা পরিশোধ করা যায়।'

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কোষাধ্যক্ষ সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা ঠিকই বলেছেন। বাজেট ঘাটতি থাকলেও কোভিড মোকাবিলার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হবে।'

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ টাকা দিয়ে তারা আবাসিক হলগুলোর সংস্কার করেছে।'

এই বক্তব্য আসার পর আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, '৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা আমরা পেয়েছি হলগুলো মেরামত করার জন্য। এটা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এই অনুদানের সঙ্গে কোভিডের কোনো সম্পর্ক নেই। হলগুলো মেরামত করলে কি কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রস্তুতি হয়ে যাবে? বাজেটের সময় আমরা কোভিডের জন্য আলাদা বাজেট চেয়েছি। এর জন্য ইউজিসি কোনো টাকা দেয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
Depositors money in merged banks

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

3h ago