‘আমাদের এত আত্মত্যাগ ব্যর্থ হতে পারে না’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এত আত্মত্যাগ ও কঠোর কর্মসূচি ব্যর্থ হতে পারে না।
শুক্রবার রাত ১১টায় শাবিপ্রবির উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দেওয়া উন্মুক্ত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের পঞ্চম দিন ও ২৩ শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের ৫৬ ঘণ্টা শেষেও আন্দোলনকারীদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব ও দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দৃঢ়তা বোঝাতে তিনি বলেন, 'গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনশনরত শিক্ষার্থী রুবিকে চিকিৎসক বলেছিলেন যে খাবার গ্রহণ না করলে তিনি কোমায় চলে যেতে পারেন, পরবর্তীতে তার নানী আজ পরলোকগমন করেন। এই জীবনসংকট এবং পারিবারিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি তার অনশন কর্মসূচি চালু রেখেছেন।'
তিনি বলেন, 'অনশনরত আরেক শিক্ষার্থী কাজল অজ্ঞান হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তার ছোট ভাইকে বলে যায় যে, তার কিছু হলে ভাই যেন কর্মসূচিতে তার জায়গা নেয় এবং অনশন চালিয়ে যায়। আরেক শিক্ষার্থী রায়হানকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকলেও খাবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী ফয়জুরের অবস্থাও বেশ আশঙ্কাজনক বলে ডাক্তাররা বলেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এত বেশি যে এত অসুস্থ হওয়ার পরও একটু সুস্থ বোধ করায় আমাদের মধ্যে আবারও অনশনস্থলে এসে হাজির হয়েছেন গতরাতে (বৃহস্পতিবার) হাসপাতালে ভর্তি করা আব্দুল্লাহ রাফি এবং কাজল দাস।'
এর আগে শুক্রবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভিডিও কলে কথা বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে। এ সময় তিনি সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় যেতে বলেন।
প্রাথমিকভাবে শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৫ জনের প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানালেও পরে অনশনরত এক শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব করতে চাওয়ায় এবং অনশনরতদের বাদ দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা না থাকায় তারা ঢাকা আসার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনে অনশনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, 'গত দুইবছর করোনাকালীন সময়ে আমরা সরকার থেকে জাতিসংঘ পর্যন্ত দেখেছি যে কোনো ধরণের আলোচনা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আলোচনা যদি অনলাইনে হয়, তাহলে আমরা অনশনকারীরাও তার সঙ্গে কথা বলতে পারব।'
তিনি বলেন, 'আমরা শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অনুরোধ জানাচ্ছি, তিনি যদি সময় করতে পারেন এবং যদি সিলেটে আসেন তাহলে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। অথবা অনলাইনে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান, সেক্ষেত্রেও আমরা রাজি আছি।'
গত বুধবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে আমরণ অনশন শুরু করা ২৪ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ জনকে এখন পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে দু'জন আবারো অনশনস্থলে ফিরে এসেছেন।
এ ছাড়াও, ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের বাবা ছেলের অনশনের সংবাদে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সে দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ায় ২৩ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
Comments