শিক্ষা

করোনা টিকা: উচ্চশিক্ষা স্তরের ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হয়নি

সরকার বলেছিল, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধিভুক্ত কলেজগুলোর সব শিক্ষার্থী গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোভিড-১৯ এর টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে উচ্চশিক্ষা স্তরের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি।

সরকার বলেছিল, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধিভুক্ত কলেজগুলোর সব শিক্ষার্থী গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোভিড-১৯ এর টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে উচ্চশিক্ষা স্তরের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি।

সরকারের সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের দরকার হয়। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর তা নেই।

এমন শিক্ষার্থীদের জন্য জন্ম সনদ ব্যবহার করে টিকার নিবন্ধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি ওয়েব লিংক খুলেছে। তবে কমিশনের কয়েক জন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত ওই লিংকটি ব্যবহার করেননি।

যদিও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সশরীরে ক্লাস শুরুর বিষয়টি বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।

তিনি বলেন, 'কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। এটা এখন ৫ শতাংশের নিচে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারে, তাহলে তারা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে ক্লাস শুরু করতে পারে।'

আর ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের আশা প্রকাশ করে বলেন, আজ মঙ্গলবার ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার পরিচালিত দিনব্যাপী বিশেষ অভিযানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের প্রথম ডোজের টিকা পাবেন।

মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোর ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী সুরক্ষা অ্যাপ কিংবা ইউজিসির ওয়েবলিংক ব্যবহার করে টিকার নিবন্ধন করেনি। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫৪ শতাংশ।

এদের বেশিরভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর শিক্ষার্থী। মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য মনে করছেন, এ কারণে ওই কলেজগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের হবে। তবে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের হার অপেক্ষাকৃত ভালো বলে জানান তিনি।

গত ২৬ আগস্ট দুটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা সাপেক্ষে মধ্য অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজগুলোতে পুনরায় সশরীরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

পরে সরকার এই অবস্থান থেকে সরে আসে। ১৪ সেপ্টেম্বর বলা হয়, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকার জন্য সব শিক্ষার্থীর অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।

নিবন্ধন

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যায়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার।

এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৩ লাখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো।  আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর  শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার।

ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ শিক্ষক দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত সচিব ফেরদৌস জামান গতকাল বিকেলে জানান, টিকা নেওয়ার জন্য সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর‌্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ৫ লাখ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে। আর দুই ডোজ টিকা পেয়েছে দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী।

মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নিবন্ধন না করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।

যোগাযোগ করা হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাহফুজ-আল-হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর অন্তত ২১ লাখ শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তিনি বলেন, 'টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা তাদের ইউজিসির লিংক ব্যবহার করে নিবন্ধন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।'

ইউজিসি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরিচয়পত্র না থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল। রোববার পর্যন্ত, ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিকে জানায় যে, তাদের ১৫ হাজার ৯৩ জন শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।

অন্যদিকে ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার।

১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ইউজিসির ওয়েবলিংকটি খোলা হয়। যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা শিক্ষার্থীরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবে। পরে ওই শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত বিবরণসম্বলিত তালিকা ইউজিসির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

এরপর ওই শিক্ষার্থীরা সরকারের সুরক্ষা অ্যাপ ব্যবহার করে  তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।

ইউজিসি আজকের মধ্যে ওয়েবলিংক ভিজিট করে সব শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন জানান, ইউজিসির লিংক ব্যবহার করে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। তিনি বলেন, 'এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে।'

পুনরায় খোলার জন্য তৈরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান চূড়ান্ত বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য (যারা অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য গ্রন্থাগার খুলে দিয়েছে।

আগামী ৫ অক্টোবর এই শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলোও পুনরায় খুলে দেওয়া হবে।

এর আগে গত শুক্রবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলো খুলে দেয়। ওই শিক্ষার্থীদেরও কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

এদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মান সপ্তম সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সশরীরে ক্লাস চালু করতে যাচ্ছে।

কোভিড মহামারির কারণে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর সরকার গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সব স্কুল-কলেজে সশরীরে ক্লাস চালু করে।

আর ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই গ্রহণের সাপেক্ষে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাসে ফেরে মেডিকেল ও ডেন্টালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Rain drenches Dhaka amid heatwave

The city dwellers got some relief after rain drenched Dhaka amid ongoing heatwave across the country today

42m ago