‘চাকরি নয়, উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামের নারীদের কল্যাণে কাজ করছি’
'চাকরি করলে হয়তো আমি একাই ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম। কিন্তু আমি উদ্যোক্তা হওয়ায় গ্রামের অনেক নারীর কল্যাণে কাজ করছি। আমার মাধ্যমে গ্রামের নারীরা কাজ করছেন, আয় করছেন এবং সে টাকায় সংসার চালাচ্ছেন,' বলছিলেন কুড়িগ্রামের লাইজু খাতুন লিমা (২৫)।
জেলার ফুলবাড় উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারী গ্রামের কৃষক হেজার উদ্দিনের মেয়ে লিমা ২০১৬ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করেন। চাকরির পেছনে ছুটেছেন অনেকদিন। অবশেষে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে আয় করছেন এবং গ্রামের নারীদের আয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।
লিমা জানান, ইউটিউবে মানুষের চুল দিয়ে হেয়ার-ক্যাপ তৈরি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এ কাজের উপর ময়মনসিংহ ও ঢাকায় দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামে ফিরেন। বাবার সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর তৈরি করে গ্রামের ৩০ জন নারীকে এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
লিমা বলেন, 'ঢাকার একটি কোম্পানীর সঙ্গে আমার চুক্তি হয়। সেখান থেকে আমাকে হেয়ার-ক্যাপ তৈরির সরঞ্জাম মানুষের চুল, রাবার পাঠানো হয়। আমি এবং গ্রামের নারীরা এখানে হেয়ার-ক্যাপ তৈরি ও ফিটিং করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিই।'
'আমাদের তৈরি হেয়ার-ক্যাপগুলো চীনে রপ্তানি করা হয়। প্রত্যেকে তিন দিনে দুইটা হেয়ার ক্যাপ তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি হেয়ার ক্যাপ তৈরি করে মজুরি পান ৩০০ টাকা,' জানালেন লিমা।
'আমিও প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার আয় করছি উদ্যোক্তা হিসেবে,' তিনি বলেন।
লিমার এখানে কাজ করেন নাসিমা বেগম (৩৪)। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত কাজ করেন। মাস শেষে প্রত্যেকে ৫-৭ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। 'হেয়ার-ক্যাপ তৈরি থেকে যে টাকা পাই তা সংসারের কাজে লাগে, বলছিলেন নাসিমা।
'লিমা আপা আমাদেরকে প্রশিক্ষন দিয়েছেন। তার এখানে কাজ করছি। হেয়ার ক্যাপ তৈরি করে আয় করছি এবং সে টাকায় আমরা নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছি,' বলেন আরেক কর্মী জেসমিন খাতুন (২৫)।
লিমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তাদের তৈরি হেয়ার-ক্যাপের ব্যাপক চাহিদা আছে। গ্রামের আরো ১৫ জন নারী এ কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তার কাছে। আগামী ছয় মাসে ১০০ জন প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তার। 'আমার এখানে জায়গার সংকুলান কম। আমি তেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও নই তাই কারখানাটি বড় করতে সময় লাগছে,' তিনি জানান।
'আমি সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে আর্থিক ঋণ সুবিধা পেলে আমার উদ্যোগকে আরও অনেক বড় করতে পারবো, গ্রামের অনেক নারীর কল্যাণে কাজ করতে পারবো, বলেন লিমা।
কথা হয় লিমার বাবা কৃষক হেজার উদ্দিনের সঙ্গে। বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি তিনি। প্রথম দিকে মেয়ের এই কাজে অসন্তুষ্ট থাকলেও এখন ভালো লাগছে অন্য মেয়েদের কাজের সংস্থান করছে দেখে।
লিমার স্বামী সামিউল ইসলাম বলেন, তার স্ত্রীকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরিতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
উদ্যোক্তা লাইজু খাতুন লিমা যাতে বেসরকারি কিংবা সরকারিভাবে আর্থিক ঋণ সুবিধা পান সেজন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান, ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস।
Comments